বিদআত থেকে সাবধান হতে করনীয়

 

বিদআত থেকে সাবধান

 বিদআত থেকে সাবধান

বিদআত বর্জন করা সম্পর্কীত কিছু হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো: 

الله عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من أحدث في رضي عن عائشة ر

أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد ‘

আমাদের এই ধর্মে (দ্বীনে) যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে তা প্রত্যাখ্যান হবে।' (সহীহ বুখারী ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম ৪৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ ৪৬০৭) অন্যত্র এরশাদ করেছেন :

وعضوا عليها بالنواجـذ

فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء المهديين الراشدين تمسكوا بها وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة

 'তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত পালন করবে। আর তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করবে। সাবধান! কখনও ধর্মে (দ্বীনে) নব প্রবর্তিত কোন বিষয় গ্রহণ করবে না। কেননা প্রত্যেক নব প্রবর্তিত বিষয়ই বিদআ'ত এবং প্রত্যেক বিদআ'তই পথভ্ৰষ্টাত।' (সহীহ মুসলিম ৪৬০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ ৪২; মুসনাদে আহমদ ১৭১৪৫) রাসূল (সা:) জুম'আর দিন খুৎবায় নিয়মিত বলতেন:

عن جابر بن عبد الله قال كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- إذا خطب.. يقول أما بعد فإن خير الحديث كتاب الله وخير الهدي هدى محمد وشر الأمور محدثاتهاوكل بدعة ضلالة 

“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম হেদায়াত হলো মুহাম্মদ (সা:) এর হেদায়াত সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নব প্রবর্তিত বিষয় বিদআ'ত এবং এরূপ প্রতিটি বিদাআ'ত-ই পথভ্রষ্টতা।' (সহীহ মুসলিম ২০৪২; সুনানে নাসায়ী ১৫৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ ৪৫) অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে

وعن حسان قال ما ابتدع قوم بدعة في دينهم إلا نزع الله من سنتهم مثلها ثم لا يعيدها

إليهم إلى يوم القيامة

'হাস্সান (রাযিঃ) বলেন, যখন কোন জাতি তাদের দ্বীনের মধ্যে বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটায় তখন আল্লাহ্ (সুব:) ঐ পরিমাণ সুন্নাত তাদের থেকে তুলে নেন যা কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো ফিরে আসে না।' (সুনানে দারেমী ৯৮; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৮৮, হাদীসটি সহীহ) শবে বরাতে দলবদ্ধভাবে কবর-মাজার যিয়ারত করা যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণভালো কাজ হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবশ্যই তার সাহাবীদের নিয়ে কবরে যেতেন। অথচ যে দূর্বল হাদীসটি দিয়ে বিদআতি আলেমগণ দলীল পেশ করেন সে দূর্বল হাদীসটিতেও বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) অতি গোপনে একা গিয়েছিলেন। মূলত কবর-মাজার পূজারী লোকেরা তাদের সপক্ষে কোনো একটি হাদীস পেলেই তাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে । হাদীসটি সহীহ না জয়ীফ না জাল তা তারা বিবেচনা করে না। অথচ জাল হাদীস থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাবধান করেছেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে 

متعمـدا

عن أبي هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- من كذب علـى 

‘আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার নামে মিথ্যা কথা বললো সে যেন অবশ্যই তার ঠিকানা জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিলো।' (বুখারী ১০৭; মুসলিম ৪; তিরমিজি ২৬৫৯; আবু দাউদ ৩৬৫৩)

فليتبوأ مقعده من النار

বিদআতে হাসানাহ-সায়্যিআহ

অনেকে বিদআতকে দুভাগে ভাগ করে। ক. হাসানাহ খ. সায়্যিআহ । বাস্তবে ইসলামে এর কোনো ভিত্তি আছে কিনা? না! ইসলামে বিদআতে হাসান বলতে কিছু নেই। বিদআতিরা নিজেদের বিদআতকে মুসলিম সমাজে বাজারজাত করার জন্য বিদআতে হাসানাহ ও সায়্যিআহ আবিষ্কার করেছে। পরবর্তীতে কিছু হকুপন্থী আলেমরাও তাদের ফাঁদে আটকে যায়। মূলত: দ্বীনের ভিতর সকল বিদআতই হারাম । যারা বিদআতকে হাসানাহ ও সায়্যিআহ বলে বিভক্ত করে, তারা ভুল করে থাকেন এবং রাসূল (সা:) এর হাদীসের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে থাকেন। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: 

عن عرباض بن سارية قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ... وإياكم ومحدثات

الأمور فإن كل محدثة بدعة وإن كل بدعة ضلالة

'তোমরা নব আবিষ্কৃত কার্যাবলী হতে সাবধন। কেননা নব আবিষ্কৃত সবকিছুই বিদআত আর নিশ্চয়ই সকল বিদআত গোমরাহী।' (মুসনাদে আহমদ ১৭১৪৪; সুনানে ইবনে মাজাহ ৪২ ) এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সা:) বিদআত প্রসঙ্গে রায় দিতে গিয়ে বলেছেন সকল বিদআতই গোমরাহী । আর বিদআতিরা বলছে: না, সকল বেদআত গোমরাহী নয় বরং কিছু বেদআত আছে হাসানাহ (ভাল)। আল্লামা হফেয ইবনে রজব বলেন: নবী আকরাম (সা.) এর বাণী (সকল বিদআত গোমরাহি) ব্যাপক অর্থ বোধক বাক্য। কোন কিছুই তার বহির্ভূত নয় । সকল প্রকারই তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এটি দ্বীনের একটি বিশেষ মূলনীতি । এটি রাসূলের নিম্নোক্ত বাণীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বক্তব্য। আল্লাহর রাসূল বলেন   'যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, সেটি পরিত্যাজ্য হবে।' সুতরাং যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করবে এবং তাকে দ্বীনের দিকে নিসবত (সম্বন্ধযুক্ত) করবে অথচ দ্বীনে তার কোন মূল ভিত্তি নেই যার দিকে সে ফিরতে পারে, সেটিই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। দ্বীন এ সকল বস্তু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।    


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা