দ্বীনের মূলনীতির অন্তর্ভূক্ত দু’টি বিষয়ঃ ইছবাত ও নাফি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
* প্রশ্ন-১ দ্বীনের মূলনীতির অন্তর্ভূক্ত দু'টি বিষয় কি কি?
উত্তরঃ- দ্বীনের ভিত্তি ও মূলনীতি হচ্ছে “একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং ত্বাগুতকে বর্জন করা । "
দ্বীনের ভিত্তি ও মূলনীতি ইছবাত (হ্যা বোধক) ও নাফি (না বোধক) নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । শাইখ আলী আল খুদাইর তাওহীদ প্রসংগে বলেন, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর এককত্ব সাব্যস্তকরন দুটি জিনিসকে ওয়াজিব করে:
১। নাফি, সমস্ত ব্যক্তি এবং বস্তুর ইবাদাকে অস্বীকার করা ( লা ইলাহা কোন
কিছুরই ইবাদত পাওয়ার যোগ্যতা নেই)
২। ইছবাত, আল্লাহর জন্য পরিপূর্নভাবে তা (ইবাদতকে) সাব্যস্ত করা ( ইল্লা আল্লাহ আল্লাহ ব্যতীত) [আত্ তাওহীদ ওয়া তাতিম্মাত' গ্রন্থে] ইমাম মুহাম্মদ বিন আঃ ওয়াহ্হাব (রহ:) বলেন, দ্বীনের মূলনীতি দু'টি বিষয়ঃ
প্রথমতঃ ক] একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেয়া যার কোন অংশীদার নেই ।
খ] এ বিষয়ে মানুষকে উৎসাহিত করা।
গ} এ নীতির ভিত্তিতেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা ।
ঘ] এটির বর্জনকারীকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা ।
দ্বিতীয়তক]
শিরককে পরিত্যাগ করা এবং আল্লাহর ইবাদতে শিরকের বিষয়ে ভয় প্রদর্শন করা।
খ] এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করা।
গ] এ নীতির ভিত্তিতে বৈরীতা স্থাপন করা।
ঘ] যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা । (আদ দুরার আসসানিয়্যাহ ২/২২)
* প্রশ্ন-২। দ্বীনের মূলনীতির অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো দালীল প্রমানসহ আলোচনা করুন?
উত্তরঃ- মূলনীতি ও ভিত্তির অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো দ্বীনের ভিত্তি ও মূলনীতি ইছবাত (হ্যা বোধক) ও নাফি (না বোধক) নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথম মূলনীতিগুলো হচ্ছে হ্যা বাচক এবং দ্বিতীয় মূলনীতিগুলো না বোধক । হ্যা বাচক এবং না বাচক দু'টি বিষয়ের প্রত্যেকটির রয়েছে চারটি করে প্রয়োজনীয় দিক। গুরুত্ব ও জরুরতের দিক থেকে প্রথমটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অত:পর দ্বিতীয়টি, অত:পর তৃতীয়টি অত:পর চতুর্থটি গুরুত্বপূর্ন।
ইমাম আব্দুর রহমান ইবন হাসান আল শাইখ রহ. বলেন, “এই মূলনীতি ও ভিত্তি সমূহের দালীল কুরআনে এতই বেশী যে তার সংখ্যা নিরূপন করা যাবে না ।” (আদ দুরার আসসানিয়্যাহ ২/২০৩)
ইছবাত বা হ্যা বাচক মূলনীতিঃ এর রয়েছে ৪ টি প্রয়েজিনীয় দিক, প্রথম দু'টি স্বয়ং তাওহীদের বিষয়ে আর শেষ দু'টি তাওহীদের লোকদের বিষয়ে । ক] একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেয়া যার কোন অংশীদার নেই আল্লাহ সুবঃ নির্দেশ দিয়েছেন,
قل يأهل الكتاب تعالوا إلى كلمة سواء بيننا وبينكم ألا نعبد إلا الله ولا نشرك به شيئا ولا يتخذ بعضنا بعضاً أرباباً من دون الله فإن تولوا فقولوا أشهدوا بأنامسلمون
“বলুন: 'হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো মুসলিম।”
(সূরা আল ইমরান ৩ঃ৬৪)
তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন,
وقضى ربك ألا تعبدوا إلا إياه
"তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না।” (সূরা, বানী ইসরাঈল ১৭৪২৩) এবং “ আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন
যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু
অধিকাংশ লোক তা জানে না।” (সূরা ইউসুফ ১২৪৪০) প্রয়োজনীয় এ প্রথম বিষয়টি হ্যা-বাচক মূলনীতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। খ] এ বিষয়ে মানুষকে উৎসাহিত করা। আল্লাহ সুবঃ বলেন,
ومن أحسن ديناً ممن أسلم وجهه لله وهو محسن واتبع ملة إبراهيم حنيفاًواتخذ الله إبراهيم خليلاً
“তার চাইতে উত্তম দ্বীন কার? যে আল্লাহ্র নির্দেশের সামনে মস্তক অবনত করে সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইবরাহীমের মিল্লাত অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন আল্লাহ্ ইবরাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।” (সূরা নিসা: ১২৫)
وهو الله لا إله إلا هو له الحمد في الأولى والآخرة وله الحكم وإليه ترجعون قل أرأيتم إن جعل الله عليكم الليل سرمدا إلى يوم القيامة من إله غير الله
يأتيكم بضياء أفلا تسمعون (71) قل أرأيتم إن جعل الله عليكم النّهار سرمدا إلى يوم القيامة من إله غير الله يأتيكم بليل تسكنون فيه أفلا تبصرون (٧٢) ومن رحمته جعل لكم الليل والنهار لتسكنوا فيه ولتبتغوا من فضله ولعلكم تشكرون [القصص/۷۱-۷۳]
“ তিনিই আল্লাহ্ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই । ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা । বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ্ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে?
তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ্ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ? তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।“ (সূরা, কাসাস ২৮ঃ ৭০-৭৩)
রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) সীরাত থেকে এই বিষয়টি সুষ্পষ্ট যে তিনি কুরবানীর স্থানে বাজারে, লোকসমাগমে যেতেন এবং লোকদেরকে তাওহীদকে আকড়ে ধরতে আহ্বান জানাতেন, লোকদেরকে এই জন্য উৎসাহিত করতেন এই বলে, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাসু কুলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তুফলিহুন ।
অর্থাৎ হে লোকসকল বল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইবাদতযোগ্য ইলাহ নেই, তোমরা সফলকাম হবে। (ইমাম আহমাদ তাঁর মুসনাদে বর্ননা করেন)। প্রয়োজনীয় এ বিষয়টি হ্যা বাচক মূলনীতির প্রথম বিষয়টির পরেই এর সরাসরি
গ) এ নীতির ভিত্তিতেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা। এই বিষয়টি সুষ্পষ্ট আল্লাহর কথা থেকে। আল্লাহ বলেন, ১৯% “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের আউলিয়া।” (সূরা তাওবাহ ৯ঃ৭১) তিনি আরও বলেন,
واعتصموا بحبل الله جميعاً ولا تفرقوا واذكروا نعمة الله عليكم إذ كنتم أعداء فألف بين قلوبكم فأصبحتم بنعمته إخواناً وكنتم على شفا حفرة من الثار فأنقذكم منها كذلك يبين الله لكم آياته لعلكم تهتدون
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ্ তোমাদিগকে দান করেছেন । তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ্ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ ।
তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (সূরা, আলে ইমরান ৩ঃ১০৩) রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
عن أبي موسى قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « المؤمن للمؤمنكالبنيان يشد بعضه بعضا
মুমিনদের পরের উদাহরন যেন একটি বিল্ডিং এর মত, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। (বুখারী) রাসুল (সাঃ) আরও বলেন,
عن أنس عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لا يؤمن أحدكم حتى يجب لأخيه ما يحب لنفسه (صحيح البخاري)
তোমাদের কেউ ততক্ষন ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষন সে অপরের জন্য তাই ভাল না বসে যা সে তার নিজের জন্য ভালবাসে। (বুখারী এবং মুসলিম) হ্যা বাচক মূলনীতির তৃতীয় এ বিষয়টির গুরত্ব সরাসরি দ্বিতীয় মূলনীতির পরে ঘ] এটির বর্জনকারীকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নির্দেশ দেন
يأيها الكافرون- لا أعبد ما تعبدون
“বলুন, হে কাফেরগন! আমি ইবাদত করিনা, তোমরা যার ইবাদত কর।” (সূরা কাফিরুনঃ ১-২) তিনি আরও বলেন,
قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه إذ قالوا لقومهم إنّا براء منكم ومما تعبدون من دون الله كفرنا بكم وبدا بيننا وبينكم العداوة والبغضاء أبدا حتى تؤمنوا بالله وحده إلا قول إبراهيم لأبيه لأستغفرن لك وما من شيء ربنا عليك توكلنا وإليك أنبنا وإليك المصير أملك لك من
“ইব্রাহীম ও যারা তাঁর সঙ্গে ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের জাতিকে বলল, তোমাদের ও তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তার সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। আমরা তোমাদেরকে মানি না। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা বোধের সূচনা হল যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না কর।” (মুমতাহিনা ৬০৪৪)
ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে হাসান (রহ) বলেন, একজন ব্যক্তি কখনই মুওয়াহহিদ হতে পারবে না, শিরককে পুরোপুরি বর্জন করা ব্যতীত, এটা থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং যে এটা করে তাকে কাফের ঘোষনা না করা পর্যন্ত । (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ২/২০৪ )
তিনি আরো বলেন, একজনের তাওহীদ পূর্ন হবে না যতক্ষন না মুশরিকদের থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে না নেবে, তাদের সাথে শত্রুতা না করবে এবং তাদেরকে কাফের বলে ঘোষনা না দিবে। (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ১১/৪৩৪) হ্যা বাচক এই চতুর্থ দিকটির গুরুত্ব সরাসরি তৃতীয়টির পরে ।
২) না বোধক মূলনীতি এর চারটি প্রয়োজনীয় দিক রয়েছে। প্রথম দু'টি
শিরকের ব্যাপারে এবং শেষ দু’টি শিরকের লোকদের ব্যাপারে । ক] শিরককে পরিত্যাগ করা এবং আল্লাহর ইবাদতে শিরকের বিষয়ে ভয় প্রদর্শন করা আল্লাহ সুবঃ তাঁর নাবী (সা:) কে নির্দেশ দিয়েছেন,
قل إنما أمرت أن أعبد الله ولا أشرك به إليه أدعو وإليه مآب
“বলুন, আমাকে এরূপ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, আমি আল্লাহ্র ইবাদত করি । এবং তাঁর সাথে অংশীদার না করি। আমি তাঁর দিকেই দাওয়াত দেই এবং তাঁর কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন।” (সূরা রাদ ১৩৪৩৬) আরও বলেছেন,
إنّى لكم نذير مبين- أن لا تعبدوا إلا الله إني أخاف عليكم عذاب يوم أليم
“নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী। তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত কারো ইবাদত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের ব্যাপারে এক যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের ভয় করছি।” (সূরা হুদ ১১ঃ২৫-২৬) ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন এক ব্যক্তি বলল, “হে আল্লাহর রাসুল সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি?” রাসুল (সঃ) বললেন, “আল্লাহর সাথে শরীক করা, অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (সহীহ বুখারী, মুসলিম) না বাচক দিকের প্রথম এই বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ।
খ] এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করা। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ف أقتلوا المشركين حيث وجدتموهم وخذوهم وأحضروهم وأقعدوا لهم كل
مرصد “মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক।” (সূরা, তাওবাহ ৯৪৫)
وقاتلوهم حتى لا تكون فتنة ويكون الدين كله لله
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা (শিরক) অবশিষ্ট থাকে; এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।“ (সূরা আনফান ৮৪৩৯)
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة فإذا فعلوا ذلك عصموا مني دماءهم وأموالهم إلابحق الإسلام وحسابهم على الله
রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে যতক্ষন না তারা স্বাক্ষ্য দিবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই । (বুখারী) আল্লাহ ঈমানদারদের নির্দেশ দিয়েছেন,
{يا أيها الذين آمنوا قاتلوا الذين يلونكم من الكفار وليجدوا فيكم غلظة
واعلموا أن الله مع المتقين } [التوبة: 123 ]
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক্ আর জেনে রাখ, আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।" (সূরা, তাওবাহ ৯৪১২৩)
ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, কুফফারদেরকে হত্যা করার জন্য, তাদেরকে রেইড দেয়ার জন্য, তাদের জন্য প্রত্যেক ঘাটিতে ওঁৎ পেতে থাকার জন্য যতক্ষন না তারা শিরক থেকে তাওবাহ করে, সলাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে ।
সকল সালফে সালেহীন গন এবং সকল মাযহাব (এর ইমামগন এবং ফুকাহদের) এই ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে । (ফাতওয়া আল আইম্মাহ আল নাজদিয়্যাহ ২/৪৭২)
এবং ইমাম (রহ) আরও বলেন, 'ত্বাগুতকে বর্জন করা'র অর্থ ও দাবী হচ্ছে আপনি নিজেকে সেসব কাফেরদের থেকে মুক্ত করবেন যারা আল্লাহকে বা
দিয়ে জ্বিন, গাছ, পাথর এবং অন্য যেকোন কিছুর ইবাদত করে এবং আপনি তাদেরকে কাফের বলে ঘোষনা দিবেন, তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলে ঘোষনা দিবেন, তাদেরকে ঘৃনা করবেন, এমনকি যদিও তারা আপনার বাবা বা ভাই হয় তবুও। (আদ দুরার আস সনিয়্যাহ ২/১১১-১১২) না-বাচক মূলনীতির এই দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় দিকটির গুরুত্ব প্রথম বিষয়ের পরে ।
গ] এ নীতির ভিত্তিতে বৈরীতা স্থাপন করা। ইবরাহীম (আ) বলেন,
قال أفرأيتم ما كنتم تعبدون - أنتم وآباؤكم الأقدمون - فإنّهم عدو لي إلارب العالمين
“ইবরাহীম বললেন, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের পূজা করে আসছ । তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা ? বিশ্বপালনকর্তা ব্যতীত তারা সবাই আমার শত্রু।”
(সূরা, শুয়ারা ২৬৪৭৫-৭৭) ইবরাহীম (আ) আরও বলেছিলেন,
وأعتزلكم وما تدعون من دون الله وأدعو ربي عسى ألا أكون بدعاء رئي
“আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদের ইবাদত কর তাদেরকে।” (সূরা মারইয়াম ১৯৪৪৮ ) আল্লাহ আমাদের হুকুম করেছেন,
واقتلوهم حيث وجدتموهم ولا تتخذوا منهم وليا ولا نصيرا
তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না। (সূরা আন নিসা ৪৪৮৯)
“যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ্ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন।” (সূরা তাওবাহ ৯:১৪ )
শাইখ আলী আল খুদাইর বলেন, শত্রুতার ধরনগুলো হচ্ছে, তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলে ঘোষনা দেয়া, তাদেরকে পরিত্যাগ করা, অভিশাপ দেয়া, উপহাস করা, হত্যা করা, বন্দী করা, বহিষ্কার করা ইত্যাদি ।
শাইখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহ) বলেন, আপনাদের যাদেরকে আল্লাহ ইসলাম দ্বারা রহমত করেছেন, যারা বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদতের যোগ্যতা নেই, এটা ভেবো না যে যদি তুমি বল, ‘এই তাওহীদ সত্য এবং আমি শিরককে পরিত্যাগ করেছি, কিন্তু আমি মুশরিকিনদের বিরোধিতা করি না, তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলি না” তাহলে তুমি ইসলামের মধ্যে থাকবে ।
বরং তুমি বাধ্য তাদেরকে ঘৃনা করতে, তাদেরকে যারা পছন্দ করে তাদেরকেও ঘৃনা করতে, তাদেরকে উপহাস করতে এবং তাদের সাথে শত্রুতা রাখতে, যেমন তোমার পিতা ইবরাহীম (আ) এবং তাঁর সাথীরা বলেছিলেন,
“তোমাদের ও তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তার সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। আমরা তোমাদেরকে মানি না। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা বোধের সূচনা হল যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না কর।” (মুমতাহিনা ৬০৪ ৪) (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ২/১০৯)
তৃতীয় এই বিষয়টির গুরুত্ব দ্বিতীয় বিষয়টির পরে ।
ঘ] যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা
আল্লাহ নির্দেশ করেছেন তাকফীরের,
“বলুন, তুমি তোমার কুফর সহকারে কিছুকাল জীবনোপভোগ করে নাও। নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা যুমার ৩৯৪৮)
قل للذين كفروا ستغلبون وتحشرون إلى جهنم وبئس المهاد} [آل عمران: 12]
“কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান।” (সূরা আলি ইমরান: ১২) ইবরাহীম (আ) তাঁর জাতির লোকদের তাকফীর করেছিলেন,
قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه إذ قالوا لقومهم إنّا براء منكم ومما تعبدون من دون الله كفرنا بكم وبدا بيننا وبينكم العداوة والبغضاء أبدا حتى تؤمنوا بالله وحده إلا قول إبراهيم لأبيه لأستغفرتُ لك وما أملك لك من الله من شيء ربنا عليك توكلنا وإليك أنبنا وإليك المصير}
“ ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, 'তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পর্কযুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: 'আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না।
হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে ।” (মুমতাহিনা ৬০ঃ ৪) (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ২/১০৯) রাসুল (সা:) কে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন, বলুন, হে কাফেরকূল, আমি ইবাদত করিনা, তোমরা যার ইবাদত কর। এবং তোমরাও ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। এবং আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি।
তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। (সূরা কাফিরুন) ইমাম আব্দুর রহমান বিন হাসান (রহ) বলেছেন, আল্লাহ অগনিত আয়াতে শিরকের লোকদের 'কাফির' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং কাফেরদের তাকফীর করা ওয়াজিব, যেহেতু কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর এটি একটি অন্যতম দিক। (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ২/২০৫)
ইমাম সুলাইমান ইবন আব্দিল্লাহ আন নাজদী (রহ) যে ব্যক্তি সেই মুশরিকিনদের তাকফীর করতে অস্বীকার করে যারা কালিমা উচ্চারন করে তাদের ব্যাপারে বলেন, যে বলে 'তারা কাফের নয় বরং অন্য কিছু’, তাহলে এটা তার থেকে বর্নিত হল যে সে মুসলিম, কারণ কুফরী এবং ইসলামের মধ্যবর্তী কিছু নেই। সুতরাং যদি তারা কাফের না হয় তবে তারা মুসলিম, আর যে ব্যক্তি কুফর কে ইসলাম বলে অথবা কাফের কে মুসলিম বলে সে কাফের হয়ে যায় । (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ৮/১৬১)
এবং না বোধক মূলনীতির এই চতুর্থ বিষয়টির গুরুত্ব তৃতীয় বিষয়টির পরে। সুতরাং এই ইছবাত (ইতিবাচক) এবং নাফি (নেতিবাচক) বিষয়গুলোকে একত্রে দ্বীনের ভিত্তি এবং মূলনীতি বলা হয়, যাকে মিল্লাতে ইবরাহীম ও বলা হয় । * প্রশ্ন-৩ দ্বীনের মূলনীতির অন্তর্গত এই বিষয়গুলো কিভাবে জানা গেল? উত্তরঃ এই মূলনীতি গুলো জানা গিয়েছে নাবী রাসুলদের দাওয়ার মাধ্যম, এবং তাদের সবার এই একই দাওয়াত ছিল । আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন,
ولقد بعثنا في كل أمة رسولا أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت [النحل/36
“আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য।" (সূরা নাহল ১৬৪৩৬) সুতরাং সমস্ত নাবী এবং রাসুলরাই তাদের জাতিকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন, “ আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর"। আল্লাহ আরও বলেছেন,
فمن يكفر بالطاغوت ويؤمن بالله فقد استمسك بالعروة الوثقى لا انفصام
لها والله سميع عليم [البق256
“যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করলো আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করলো যা কখনো ছিড়ে যাবার নয়”। (আল বাক্বারাহ ২৪ ২৫৬) উপরোক্ত আয়াতে নেতিবাচক দিক হচ্ছে, এর মধ্যে
রয়েছে “কারোরই ইবাদতের যোগ্যতা নেই” ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ৬ % এর মধ্যে রয়েছে “একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত”। আর এটাই মূলতঃ তাওহীদের কালেমা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' দ্বারা বোঝায় ।
সুতরাং প্রত্যেক নাবী এবং রাসুল নাফি (কারোরই ইবাদত যোগ্যতা নেই) এবং ইছবাত (একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত) নিয়ে আগমন করেছেন এবং এটিই হচ্ছে তাওহীদের কালিমা, যা হচ্ছে এই কথার সমান একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগুতকে বর্জন কর । এবং এটিই হচ্ছে ইসলামের মূল ভিত্তি। এবং এটাই ছিল নাবী মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম লক্ষ্য, যার ব্যাপারে তিনি বলেন,
عن ابي هريرة *: أمرت أن أقاتل الناس حتى يقولوا لا إله إلا الله فمن قال لا
إله إلا الله فقد عصم منى ماله ونفسه إلا بحقه وحسابه على الله
“আমি আদিষ্ট হয়েছি লোকদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যতক্ষন না তারা স্বাক্ষ্য দিবে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসুল, সলাত প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত আদায় করে। যদি তারা এগুলো করে তবে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার থেকে নিরাপত্তা পাবে ইসরামের বৈধ আইন ব্যতীত, এবং (এরূপ করলে) তাদের বিষয় আল্লাহর নিকট । (বুখারী ও মুসলিম)।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন