ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
* প্রশ্ন-১। ইসলাম কি?
উত্তরঃ- ইসলাম একটি আরবী শব্দ। ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্মসমর্পন করা। ইসলাম মানে আল্লাহর কাছে পরিপূর্ন আত্মসমর্পণ, নিজেকে সঁপে দেয়া এবং পরিপূর্ণ তাওহীদের স্বীকৃতি দেয়া, সকল প্রকার শিরক ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা। ইসলামিক পরিভাষায় ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা দ্বীনের নাম, যা মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে ইসলাম অর্থ ইসতিসলাম, আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া, আত্মসমর্পন করা, আত্মসমর্পনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা, এবং রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর অনুসরন করা এবং শিরক থেকে পবিত্র হওয়া এবং শিরকের লোকদের থেকে মুক্ত হওয়া। (আদ দুরার আস সানিয়্যাহ ১/১২৯)
* প্রশ্ন-২। মুসলিম কে?
উত্তরঃ- আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা হাক্ ও পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলাম। আল্লাহর কাছে যে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেয়, আত্ম সমর্পণ করে আনুগত্য করে,
এককভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করে, সমস্ত শিরক থেকে মুক্ত হয়, শিরকের লোকদের থেকে মুক্ত হয়, এবং তার জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মেনে নেয় রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) অনুসরনে সেই মুসলিম শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, 'সুতরাং ইসলাম মানে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পন করা, তিনি ব্যতীত অন্য কারো কাছে নয় শুধু তাঁরই ইবাদত করা, কাউকে তাঁর শরীক না করে । তাঁর প্রতি নিজেকে পূর্ন সপে দেয়া, তাঁর কাছেই আশা করা এবং তাঁকেই একমাত্র ভয় করা। তাঁকেই ভালবাসা, যথার্থ এবং পরিপূর্ণ ভালবাসা, সৃষ্টির কাউকেই এমন ভাল না বাসা। সুতরাং যে অপছন্দ করে এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে, তাহলে সে মুসলিম নয় এবং যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাহ করে বা তাঁর পাশাপাশি তাহলেও সে মুসলিম নয়।” (কিতাব আন নুবুওয়্যাত, ১২৭)
• প্রশ্ন-৩। ইসলাম অর্থ শাস্তি কেন করা হয়ে থাকে?
উত্তরঃ- ইসলাম অর্থ শান্তি এ কথা কোন নির্ভরযোগ্য অভিধানে নেই। অনেক মুসলিমগন অজ্ঞতার ভিত্তিতে ইসলাম মানে শাস্তি করে থাকে। আরেক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে জিহাদ এবং বাতিলের সাথে ইসলামের অনিবার্য দ্বন্দ ও সংঘাতকে
এড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের অর্থ শান্তি করে থাকে। অথচ ‘হানসভে' নামে একজন খ্রিষ্টান তার বিখ্যাত আরবী-ইংরেজী অভিধানে ইসলামের অর্থ করেছে-
Submission, resignation to the will of God. A Dictionary of Mordern Written Arabic
এ ইসলাম মানে করা হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে বশ্যতা স্বীকার করা ও সমর্পণ করা। তবে এটা সত্য ইসলাম পরিপূর্নভাবে মানলে অবশ্যই শান্তি আসবে।
* প্রশ্ন-৪। ইসলাম পরিপূর্ন দ্বীন’ তার প্রমান কি?
উত্তরঃ- ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ন একটি দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা, তার প্রমান হচ্ছে আল্লাহর বানীঃ
اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম । আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্নতা দিলাম আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।" (সূরা, মায়িদাহ ৫ঃ৪৩)
* প্রশ্ন-৫। ইসলামই একমাত্র গ্রহনযোগ্য দ্বীন, অন্য কোন দ্বীন গ্রহনযোগ্য নয়' তার প্রমান কি?
উত্তরঃ- ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য একমাত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। এর প্রমান হল কুরআনে আল্লাহ সুবঃ বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হল ইসলাম।” (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ১৯)
ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه وهو في الآخرة من الخاسرين
“কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তা কখনো গ্রহনযোগ্য হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আল ইমরান ৩ঃ৮৫)
* প্রশ্ন-৬। ইসলামের ব্যাপারে আমাদের প্রতি নির্দেশ কি?
উত্তরঃ- ইসলামের ব্যাপারে আমাদের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে ইসলামকে নিজের পরিপূর্ন দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহন করা, পরিপূর্নভাবে ইসলামে দাখিল হওয়া, অনুসরন করা, মানা। ইসলামের কিছু মানা কিছু বর্জন করা চলবে না এবং আমরন ইসলামের উপর টিকে থাকা। এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন- ৪. হে ঈমানদারগন! পরিপূর্ণভাবে ইসালামে দাখিল হও।” (সূরা বাকারাহ : ২০৮)
“আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।” (সূরা আল ইমরান : ১০২)
* প্রশ্ন-৭। যে ব্যক্তি ইসলামের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ মানবে না তাদের ব্যাপারে কি বলা হয়েছে?
উত্তরঃ- যে ব্যক্তি ইসলামের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশকে অস্বীকার করবে সে কাফির, তার পরিনতি ভয়াবহ, দুনিয়াতে তার জন্য রয়েছে লাঞ্চনা এবং আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ সুবঃ বলেন,
أفتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعـل ذلـك مـنكم
إلا خزي في الحياة الدنيا ويوم القيامة يردون إلى أشد العـذاب ومـا الله بغافـل عمّا تعملون
“তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌছে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।” (সূরা বাক্বারাহ ২৪৮৫)
* প্রশ্ন-৮। ইসলামের মূল উৎস কি?
উত্তরঃ- ইসলামের মূল উৎস দু'টি। কুরআন ও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এ ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জ্বে বলেছিলেনঃ
تركت فيكم شيئين لن تضلوا بعدهما كتاب الله وسنتى ولن يتفرقا حتى يردا
“আমি তোমাদের মাঝে দু'টি জিনিস রেখে গেলাম। তোমরা যতক্ষন এগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, আরেকটি হলো আমার সুন্নাহ।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
* প্রশ্ন-৯ । ইসলামের ভিত্তি কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ- ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি।
১. এ বিষয়ে স্বাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল ।
شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله
২. সালাত কায়েম করা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. আল্লাহর ঘরে হজ্জ্ব আদায় করা ।
৫. রমাদানে সিয়াম পালন করা।
بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام
الصلاة وإيتاء الزكاة والحج وصوم رمضان )
ইবনে উমার (রা) থেকে বর্নিত, নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ বিষয়ে স্বাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইবাদত যোগ্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসুল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, (আল্লাহর) ঘরের হাজ্জ্ব আদায় করা এবং রমাদানে সিয়াম পালন করা। (বুখারী ও মুসলিম)
* প্রশ্ন-১০। ইসলামের স্তর বা সোপান কয়টি?
উত্তরঃ- ইসলামের তিনটি স্তর বা সোপান রয়েছে, এগুলো হচ্ছে ১. মুসলিম হওয়া, ২. ঈমান লাভ করা এবং ৩. ইহসান বা ঈমানের পূর্ণতা লাভ করা।
* প্রশ্ন-১১ । কতক্ষন পর্যন্ত একজন ব্যক্তি তার জান-মালের নিরাপত্তা পাবে না।
উত্তরঃ- আল্লাহ সুবঃ বলেন,
فإذا انسلخ الأشهر الحرم فاقتلوا المشركين حيث وجدتموهم وخذوهم
واحضروهم واقعدوا لهم كل مرصد فإن تابوا وأقاموا الصلاة وآتوا الزكاة فخلوا
سبيلهم إنّ الله غفور رحيم [التوبة/5]
“অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, সলাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা তাওবাহ ৯৪৫)
তিনি আরও বলেন,
فإن تابوا وأقاموا الصلاة وآتوا الزكاة فإخوانكم في الدين ونفصل الآيات لقوم
“অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সবিস্তারে বর্ণনা করে থাকি।” (সূরা তাওবাহ ৯৪১১) রাসুল (সাঃ) বলেন,
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة فإذا فعلوا ذلك عصموا مني دماءهم وأموالهم إلا
الله بحق الإسلام وحسابهم على ا
“আমি আদিষ্ট হয়েছি লোকদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যতক্ষন না তারা স্বাক্ষ্য দিবে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসুল, সলাত প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত আদায় করে। যদি তারা এগুলো করে তবে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার থেকে নিরাপত্তা পাবে ইসলামের বৈধ আইন ব্যতীত, এবং (এরূপ করলে) তাদের বিষয় আল্লাহর নিকট । (বুখারী ও মুসলিম)
প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) বনু হানিফা গেত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন যখন তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করে, যদিও তারা শাহাদাহ উচ্চরন করত, সলাত পড়ত এবং ইসলামের অন্যান্য হুকুম মানত ।
ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, কুফফারদেরকে হত্যা করার জন্য, তাদেরকে রেইড দেয়ার জন্য, তাঁদের জন্য প্রত্যেক ঘাটিতে ওঁৎ পেতে থাকার জন্য যতক্ষন না তারা শিরক থেকে তাওবাহ করে, সলাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে। সকল সালফে সালেহীনগন এবং সকল মাযহাব (এর ইমামগন এবং ফুকাহাদের) এই ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে । (ফাতওয়া আল আইম্মাহ আল নাজদিয়্যাহ ২/৪৭২)
সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত সুষ্পষ্ট যে একজন ব্যক্তি ততক্ষন পর্যন্ত তার জান মালের নিরাপত্তা পাবে না যতক্ষন না সে শাহাদাহ উচ্চারন করবে এবং এর দাবী অনুযায়ী কাজ করবে (যেমন এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সমস্ত শিরক থেকে মুক্ত থাকবে, সব বাতিল মা'বুদ তথা ত্বাগুতদের ও তার অনুসারী মুশরিকদের সাথে বারাআহ ঘোষনা করবে, তাদের সাথে শত্রুতা করবে, ঘৃনা করবে,তাদেরকে তাকফীর করবে ইত্যাদিসহ এই সংক্রাস্ত যাবতীয় বিষয় মেনে নিবে ও সেই অনুযায়ী কাজ করবে), সলাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত আদায় করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ (সুব:) বলেন:
قد كانت لكم أسوة حسنة في إبراهيم والذين معه إذ قالوا لقومهم إنّا براء
منكم ومما تعبدون من دون الله كفرنا بكم وبدا بيننا وبينكم العداوة
অর্থ:- ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, 'তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পর্কযুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন (সুরা মুমতাহিনা ৪)
ভাল কিছু জানতে আমাদের সাইটের সাথেই থাকুন।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন