মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও আল্লাহর প্রতি মানুষের কর্তব্য কি?

 

মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও আল্লাহর প্রতি মানুষের কর্তব্য কি?
মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও আল্লাহর প্রতি মানুষের কর্তব্য কি? 


প্রশ্ন-১। আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় কি বলেছিলেন? 

উত্তরঃ- মানবজাতিকে (অর্থাৎ সর্বপ্রথম মানব আদম ও তাঁর স্ত্রীকে) এ দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা) বলেছিলেনঃ

 قلنا الهبطوا منها جميعا فإما يأتينكم مني هدى فمن تبع هداي فلا خوفعليهم ولا هم يحزنون

“আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্ত্রস্ত হবে।” (সূরা বাকারা ২৪৩৮) 

আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মানবজাতির নিকট পাঠাবেন হিদায়াত, আর যারা সে হিদায়াতের অনুসরন করবে তাদের কোন চিন্তা থাকবে না বরং তারা সফলকামদের অন্তর্ভূক্ত হবে।

 প্রশ্ন- ২ । আমাদের কি এমনি এমনি কোন উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করা হয়েছে? 

উত্তরঃ- আল্লাহ্ (সুবঃ) এমনি এমনিই কোন উদ্দেশ্য ছাড়া আমাদেরকে সৃষ্টি করেননি, বরং আমাদের সৃষ্টির পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য। আল্লাহ্ (সুবঃ) বলেন:

أفحسبتم أنما خلقناكم عبثا وأنكم إلينا لا ترجعون

“তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?” (সূরা, মু'মিনুন ২৩ঃ১১৫) 

 প্রশ্ন-৩ । মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য কি? 

উত্তরঃ- মানুষ সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, এ সম্পর্কে আল্লাহ্ (সুবঃ) তায়ালা বলেনঃ

وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون 

অর্থাৎ “আমি মানুষ এবং জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” । (যারিয়াত ৫১:৫৬ )

‘লি’য়াবুদু-ন’ এর ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন ‘লিওয়াহিদুন' অর্থাৎ আমার (আল্লাহর) একত্বকে মেনে নেয়ার জন্যই আমি তাদের সৃষ্টি করেছি। সুতরাং তাওহীদকে মেনে নিয়ে এককভাবে শুধু আলাহর ইবাদত করার জন্যই আল্লাহ্ (সুবঃ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ।

প্রশ্ন-৪ । মানুষের প্রতি আল্লাহর হক্ব কি?

উত্তরঃ- মানুষের প্রতি আল্লাহর হক্ক হচ্ছে কোন প্রকার শরীক না করে আল্লাহর ইবাদত করা। রাসূল (সল্লাল্লাহ্হ্ 'আলাইহি ওয়াস সালাম) বলেছেনঃ

“বান্দার প্রতি আল্লাহর হক্ হচ্ছে তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না।” (মুসলিম, ইফাবা/৫০)

প্রশ্ন-৫ । প্রত্যেক মানুষের উপর কোন চারটি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা অবশ্য কর্তব্য তথা ফরজ?

উত্তরঃ- শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহ:) বলেন, হে (পাঠক)! আল্লাহ্ তোমার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করুন! অবহিত হও যে, চারটি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য (ফরজ)

(১) জ্ঞানঃ এমন জ্ঞান যার সাহায্যে দলীল প্রমাণ সহ আল্লাহ, তাঁর নাবী এবং দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সম্যক পরিচয় লাভ করা যায় ।

(২) ঐ জ্ঞানের বাস্তব রূপায়ণ। 

(৩) তার দিকে (মানুষকে) আহবান করা। 

(৪) এই কর্তব্য পালনে সম্ভাব্য কষ্ট ও বিপদ-বিপর্যয়ে ধৈর্য ধারণ । উপরোক্ত কথার প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ

 والعضر إنّ الإنسان لفي خسر إلا الذين آمنوا وعملوا الصالحات وتواصوا بالحقوتواصوا بالصب

“আবহমান কালের শপথ সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু (শুধুমাত্র তারা ছাড়া) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজগুলি সম্পাদন করেছে, আর যারা পরস্পরকে সত্য-নিষ্ঠা ও ধৈর্য ধারণের (নিরন্তর) উপদেশ দিয়ে থাকে ।” (সূরা আল আসর্) [সালাসাতুল উসুল ওয়া আদিল্লাতুহা]

প্রশ্ন-৬ । কোন তিনটি মৌলনীতি সম্পর্কে প্রত্যেক মানুষের জানা ওয়াজিব? 

উত্তরঃ- শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহ:) বলেন, যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনটি মৌল নীতি কি যা প্রত্যেক মানুষেরই জানা অবশ্য কর্তব্য? 

তুমি উত্তর দেবে বিষয় তিনটি হলঃ

১) প্রত্যেক মানুষকে তার রব (প্রতিপালক) সম্পর্কে জানা।

২) তাঁর দ্বীন বা জীবন বিধান সম্পর্কে জানা, এবং 

৩) তাঁর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে জানা। [সালাসাতুল উসুল ওয়া আদিল্লাতুহা]

প্রশ্ন ৭। বান্দার প্রতি সর্বপ্রথম ওয়াজিব কি? 

উত্তরঃ- ইমাম মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) বলেনঃ “আদম সন্তানের ওপর আল্লাহ তাআ'লা সর্বপ্রথম যে ফরজটি চাপিয়ে দিয়েছেন তা হচ্ছে, ত্বাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।” এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ

ولقد بعثنا في كل أمة رسولا أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت

 “আমি প্রত্যেক উম্মতের কাছে এ মর্মে রাসুল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিবার জন্য যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো আর ত্বাগুত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকো ।“ (নাহলঃ ৩৬)

প্রশ্ন-৮ । মানুষ মূলত: কয় ভাগে বিভক্ত? তাদের মাঝে শত্রুতার শুরু হয় কিভাবে? 

উত্তরঃ- আল্লাহ্র সমগ্র সৃষ্টি মু’মিন আর কাফির এই দু’টি ভাগে বিভক্ত । যেমন আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

هو الذي خلقكم فمنكم كافر ومنكم مؤمن والله بما تعملون بصير 

“তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ হয় কাফের এবং তোমাদের মধ্যে কেউ হয় মু'মিন।” (সূরা তাগাবুন ৬৪ঃ ২) 

মু'মিন ও কাফিরের এই পৃথকীকরণের মাধ্যমেই তাদের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

إنّ الكافرين كانوا لكم عدوا مبينا [النساء

“নিশ্চয়ই কাফেরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা নিসা ৪ঃ ১০১)

 وكذلك جعلنا لكل نبي عدوا من المجرمين وكفى بربك هاديا ونصيرا 

“আমি এভাবেই প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছিলাম অপরাধীদের মধ্য থেকে।” (সূরা ফুরকান ২৫৪৩১)

 ولقد أرسلنا إلى ثمود أخاهم صالحا أن اعبدوا الله فإذا هم فريقان يختصمون

“আমি অবশ্যই সামুদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম এই আদেশসহঃ ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর'। কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলো।” (সূরা নামল ২৭:৪৫)

পোষ্টটি কেমন হলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

বিদআত থেকে সাবধান হতে করনীয়