আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের বিধান কি ?
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের বিধান কি?
উত্তর: আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা ফরজ। ইরশাদ হচ্ছে:
{شرع لكم من الدين ما وصى به نوحا والذي أوحينا إليك وما وصينا به إبراهيم
موسى وعيسى أن أقيموا الدين ولا تتفرقوا فيه} [الشوري :
অর্থ: “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; (তা হচ্ছে ঐ জীবন ব্যবস্থা) যার ব্যাপারে তিনি নূহ (আ:) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আমি (আল্লাহ) তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এই ব্যাপারে (দ্বীন কায়েম করতে গিয়ে) একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”৩৯
যেহেতু এ আয়াতটিকে দ্বীন ও দ্বীনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোকপাত করা হয়েছে, তাই এর ব্যাপারে ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে তা বুঝে নেয়া আবশ্যক: বলা হয়েছে । “তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।” শব্দের আভিধানিক অর্থ 'রাস্তা তৈরী করা' এবং এর পারিভাষিক অর্থ পদ্ধতি, বিধি ও নিয়ম-কানুন রচনা করা । এই পারিভাষিক অর্থ অনুসারে আরবী ভাষায় এ শব্দটি আইন প্রণয়ন (Legislation)| ৯ এবং ১n এ শব্দটি আইন (Law) এবং শব্দটি আইন প্রণেতার (Lawmaker) শব্দের সমার্থক বলে মনে করা হয়। আল্লাহই বিশ্ব জাহানের সব কিছুর মালিক, তিনি মানুষের প্রকৃত অভিভাবক এবং মানুষের মধ্যে যে বিষয়েই মতভেদ হোক না কেন তা ফয়সালা করার দায়িত্ব তারই। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের যেসব আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তার সহজ ব্যাখ্যা হলো 'পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ (সুব:) এমন আইন রচনা করবেন যার দ্বারা মানুষের মধ্যে ফয়সালা করা যায় । আর যেহেতু আল্লাহই প্রকৃত মালিক, অভিভাবক ও শাসক তাই মানুষের জন্য আইন ও বিধান রচনা করা এবং মানুষকে এই আইন ও বিধান দেয়ার অধিকার কেবলমাত্র তাঁরই পরের অংশে বলা হয়েছে । 'দ্বীন থেকে', শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী এই শব্দের অনুবাদ করেছেন 'আইন থেকে' অর্থাৎ আল্লাহ ‘শরীয়ত নির্ধারণ করেছেন যা আইনের পর্যায়ভুক্ত। দ্বীন অর্থই কারো নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তার আদেশ ও নিষেধের আনুগত্য করা। এ কারণেই আল্লাহ নির্ধারিত এই পদ্ধতিকে ‘আইন' বলার পরিষ্কার অর্থ হল, এটা শুধু সুপারিশ (Recomended) ও ওয়াজ-নসীহতের মর্যাদা সম্পন্ন নয় বরং তা বান্দার জন্য মালিকের অবশ্য অনুসরণীয় আইন, যার অনুসরণ না করার অর্থ হলো 'বিদ্রোহ করা'। যে ব্যক্তি এই আইনের অনুসরণ করবে না সে প্রকৃতপক্ষে আধিপত্য, সার্বভৌমত্ব এবং দাসত্ব অস্বীকার করলো । রাষ্ট্রের আইন অমান্য করলে যেভাবে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয় তেমনি ভাবে আল্লাহর আইন অমান্য করলে তাকেও আল্লাহদ্রোহী বলা হবে যা রাষ্ট্রদ্রোহী হওয়ার চেয়েও ভয়ানক ।
আয়াতের এর পরের অংশে বলা হয়েছে দ্বীনের এই 'আইন'ই সেই ‘আইন’ যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল নুহ, ইবরাহীম ও মুসা (আ:) কে এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেই একই নির্দেশ দান করা হয়েছে। এই বাণী থেকে কয়েকটি বিষয় বুঝে আসে:
১. আল্লাহ এই বিধানকে সরাসরি সব মানুষের কাছে পাঠাননি, বরং মাঝে মধ্যে যখনই তিনি প্রয়োজন মনে করেছেন এক ব্যক্তিকে তাঁর রাসূলুল্লাহ মনোনীত করে এই বিধান তার কাছে সোপর্দ করেছেন। যিনি অন্যান্য
লোকদের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছেন । ২. প্রথম থেকেই এই বিধান এক ও অভিন্ন । এমন নয় যে, কোন জাতির জন্য কোন একটি দ্বীন নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং অন্য সময় অপর এক জাতির জন্য তা থেকে ভিন্ন ও বিপরীত কোন দ্বীন পাঠিয়েছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে একাধিক দ্বীন আসেনি বরং একটি দ্বীনই এসেছে । ৩. আল্লাহর আধিপত্য ও সার্বভৌমত্ব মানার সাথে সাথে যাদের মাধ্যমে এ বিধান পাঠানো হয়েছে তাদের রিসালাত মানা এবং যে ওহীর দ্বারা এ বিধান বর্ণনা করা হয়েছে তা মেনে নেয়া এ দ্বীনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। জ্ঞান-বুদ্ধি ও যুক্তির দাবিও তাই । কারণ, যতক্ষণ পর্যন্ত তা আল্লাহর তরফ থেকে হওয়া সম্পর্কে ব্যক্তি নিশ্চিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে এই আনুগত্য করতেই পারে না। অতপর বলা হয়েছে, এসব নবী-রাসূলদেরকে এই বিধান দেওয়ার সাথে সাথে এই নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল যে, । অর্থাৎ শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভী এই আয়াতাংশের অনুবাদ করেছেন “দ্বীনকে কায়েম করো আর শাহ রফী উদ্দীন ও শাহ আব্দুল " কাদের অনুবাদ করেছেন যে, “দ্বীনকে কায়েম রাখো” এই দুইটি অনুবাদই সঠিক । এট। শব্দের অর্থ ‘কায়েম করা’ ও ‘কায়েম রাখা’ উভয়ই।
নবী-রাসূলুল্লাহগন (আ:) এই দুটি কাজ করতেই আদিষ্ট ছিলেন। তাঁদের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল যেখানে এই দ্বীন কায়েম নেই সেখানে তা কায়েম করা । আর দ্বিতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল যেখানে তা কায়েম হবে কিংবা পূর্ব থেকেই কায়েম আছে সেখানে তা কায়েম রাখা। একথা সুস্পষ্ট যে, কোন জিনিসকে কায়েম রাখার প্রশ্ন তখনই আসে যখন তা কায়েম থাকে। অন্যথায় প্রথমে তা কায়েম করতে হবে, তারপর তা যাতে কায়েম থাকে সে জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাতে হবে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন