ইক্বামাতে দ্বীনের দায়িত্ব কার?
ইক্বামাতে দ্বীনের দায়িত্ব কার?
উত্তর: আল্লাহ (সুব:)এ দায়িত্ব দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছেন। যেমন কুরআন পাকের তিনটি সূরায় এ বিষয়ে পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে:
هو الذي أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله [التوبة/33،
অর্থ: “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন ।"৩৭ কিন্তু এ দায়িত্ব কি শুধু রাসুলেরই!
রাসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তাঁরা কি শুধু সালাত, সাওম ও অন্যান্য কতক ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করাই নাজাতের জন্য যথেষ্ট মনে করতেন? কুরআন ও হাদীস একথার সাক্ষী দেয় যে, প্রত্যেক ঈমানদারকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনে জান ও মাল দ্বারা পূর্ণরূপে শরীক হতে হতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইমামতিতে মদীনার মসজিদে জামায়াতে সালাত আদায়কারী এক হাজার লোক নিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধে রওনা হলেন । কিছুদূর যেয়ে আব্দুল্লাহ বিন উবাই এর নেতৃত্বে তিনশ’ লোক যুদ্ধে শরীক না হয়ে ফিরে এলো। আল্লাহ (সুব:)এদেরকে মুনাফিক বলে ঘোষণা করলেন । তাবুকের যুদ্ধে তিনজন সাহাবী যথাসময়ে রওয়ানা না হওয়ায় এবং পরে রওয়ানা হবার নিয়ত থাকা সত্ত্বেও রাসূলের নির্দেশে তাদেরকে মুসলিম জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন ঘোষণা করা হলো। এমনকি তাদের বিবি বাচ্চাদেরকে পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। এ অবস্থায় দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন লাগাতার তাওবা করার পর আল্লাহ (সুব:) তাদেরকে ক্ষমা করলেন ।
এ থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন তা বাস্তবায়নে পূর্ণভাবে শরীক হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী। সুতরাং বুঝা গেল যে, ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপরই আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ মহান দায়িত্বে শরীক না হলে ঈমান আনার প্রয়োজনই কি ছিল? কুরআনে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখ দিয়েই প্রকাশ করানো হয়েছে যে: অর্থ: “সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আমার আনুগত্য কর ।
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণ আনুগত্য করার মাধ্যমেই আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব । আল্লাহ পাক যত হুকুম করেছেন, যত বিধান দিয়েছেন তা বাস্তবে মানব সমাজে তখনই প্রচলন হতে পারে যখন দ্বীনে হক কায়েম করা হবে । কোন ফরয বিধানই দ্বীনে বাতিলের অধীনে থেকে ফরযের মর্যাদা পায় না। ‘ইক্কামাতে দ্বীন’ ছাড়া কোন হারামই সমাজ থেকে উৎখাত হতে পারে না । তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যত ফরজ কায়েম করতে পেরেছিলেন তা ইকামাতে দ্বীনের ফলেই সম্ভব হয়েছিল । দ্বীন কায়েম করতে না পারলে কোন ফরজই সমাজে চালু করতে পারতেন না। সুতরাং ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বটাই সব ফরজের বড় ফরজ। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বকে অগ্রাহ্য করে সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি কোন ফরজকেই ঠিকভাবে সমাজে কায়েম করা সম্ভব নয়। তেমনি দ্বীন কায়েম করা ছাড়া সমাজ থেকে খারাবী ও অন্যায়কে উৎখাত করা যায় না।
তাহলে একথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরিযায়ে ইক্বামাতে দ্বীন) প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ। অর্থাৎ দ্বীনকে কায়েম বা বিজয়ী করার চেষ্টা করা “ফরযে আইন” । অবশ্য দ্বীন বিজয়ী হয়ে গেলে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালক সরকারের উপরই দ্বীনকে কায়েম রাখার দায়িত্ব থাকে। তখন এটা সাধারণ মুসলিমদের জন্য “ফরযে কিফায়া” হয়ে যায়। কিন্তু দ্বীনে বাতিলকে পরাজিত করে দ্বীনে হককে বিজয়ী করার দায়িত্বটি অবশ্যই “ফরযে আইন”।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (উৎকৃষ্টতম আদর্শ) ও সাহাবায়ে কেরামকে অনুকরণ যোগ্য মনে করলে একথা স্বীকার করা ছাড়া উপায় নেই । সব ফরজের বড় ফরজ হিসেবে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্বকে বুঝাবার পর কারো পক্ষেই ইসলামের কতক মূল্যবান খেদমত করেই সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয় । অবশ্য এ দায়িত্বের অনুভুতিই যাদের নেই তাদের কথা আলাদা। নাজাত দেয়ার মালিক যে মহান আল্লাহ তিনিই তাদের হাল জানেন এবং তিনি কারো উপর অবিচার করবেন না একথা নিশ্চিত। কিন্তু আল্লাহ পাক যাদেরকে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরিযাহ) বুঝবার যোগ্যতা দিয়েছেন তাদের পক্ষে এ বিষয়ে অবহেলা করা স্বাভাবিক নয়। মাদ্রাসা, খানকাহ ও তাবলীগের মাধ্যমে দ্বীনের যতটুকু খেদমত হচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন