কুফফারদের জুলুম-নির্যাতনের মোকাবেলায় আমাদের করণীয় কি?
কুফফারদের জুলুম-নির্যাতনের মোকাবেলায় আমাদের করণীয় কি?
উত্তর: আল্লাহ (সুব:)এবং রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ও হাদীসে যুগে যুগে কুফফারদের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র তুলে ধরেছেন । এর উদ্দেশ্য এই নয় যে আমরা মুসলিমরা ভয় পেয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবো এবং হিকমার নামে কুরআন-সুন্নাহের ঐ সকল বিষয়গুলো আলোচনা করব এবং আমল করবো যাতে কাফেররা ক্ষেপে না যায় এবং জিহাদ বিহীন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা বিহীন খৃষ্টানদের বৈরাগ্যবাদের মত ইসলামকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে কাফেরদের পরিকল্পনা মতো এক অভিনব মডারেট ইসলাম প্রচার করবো।
শুধু আসমানের উপরের আর জমিনের নিচের কথা বলবো। ইসলামের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সমরনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি, পরাষ্ট্রনীতি, আইন, বিচার ইত্যাদি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মসজিদের মধ্যে ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে রাখবো । না! এ জন্য আল্লাহ (সুব:) পবিত্র কুরআনে এগুলো উল্লেখ করেন নি । বরং এগুলো উল্লেখ করেছেন, যাতে মু'মিনরা যে কোন কঠিন পরিস্থিতি ও যে কোন জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে ইসলামের উপর অটল থাকতে পারে এবং এই বিশ্বাস রাখে যে, তাদের পূর্বসুরীদের সাথে যেই আচরণ করা হয়েছে তাদের সঙ্গেও সেই আচরণই করা হবে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় মু'মিনদের জন্যই অবধারিত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ (সুব:) ইরশাদ করে:
وكلا نقص عليك من أنباء الرسل ما نسبت به فؤادك [هود : ۱۲۰]
অর্থ: “আর রাসূলদের এসকল সংবাদ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি যার দ্বারা আমি তোমার মনকে স্থির করি । পবিত্র কুরআনে আরেক আয়াতে আল্লাহ (সুব:) নুহ (আ:) ও তার জাতির আলোচনা করতে গিয়ে বলেন:
{تلك من أنباء الغيب نوحيها إليك ما كنت تعلمها أنت ولا قومك من قبل هـذا
অর্থ: “এগুলো গায়েবের সংবাদ, আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে তা জানাচ্ছি। ইতঃপূর্বে তা না তুমি জানতে এবং না তোমার কওম। সুতরাং তুমি সবর কর। নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সাহাবায়ে কিরামদের সামনে পূর্বের যুগের মুসলিমদের উপর কাফেরদের নির্যাতনের ঘটনা শুনাতেন এবং তাদেরকে পূর্বের যুগের দ্বীনে হকে অনুসারীদের মত ধৈর্য ধারণ করা ও অটল থাকার জন্য উৎসাহিত করতেন। আর সাহাবাগণও সেভাবে তৈরী হয়েছিলেন। তারা দ্বীনে বাতিলের জনবল, অর্থবল, অস্ত্রবল কোন কিছুকেই পরোয়া করতেন না। পবিত্র কুরআনে তাদের বীরত্বকে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে:
{الذين قال لهم الناس إن الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم إيمانا وقـالوا
حسبنا الله ونعم الوكيل} [آل عمران : ۱۷۳]
অর্থ: “যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, 'নিশ্চয় লোকেরা (যুদ্ধ করার জন্য) তোমাদের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় কর'। কিন্তু এই কথা তাঁদের ঈমান আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তাঁরা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’!
যুগে যুগে যারাই প্রকৃত মুমিন হিসাবে নিজেকে প্রমাণিত করতে পেরেছে, আল্লাহ (সুব:)তাঁদেরকেই সাহায্য করেছেন। এর বাস্তব প্রমাণ হলো: আমরা লক্ষ্য করছি যে, আমেরিকা যখন প্রথম আফগানিস্তানে হামলা করে তখন তারা বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশীল ছিল । পক্ষান্তরে মুসলিমরা ছিল দূর্বল ও অনভিজ্ঞ। তাঁরা শুধু আফগানিস্তানেই যুদ্ধ করছিল। কিন্তু সামান্য দশ বছরের মধ্যে আমেরিকার সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের দেশে দারিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বর্তমান ওবামা প্রশাসন এক লক্ষ সৈনিক ছাটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। অপর দিকে মুসলিম মুজাহিদদের শক্তি পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী ও অনেক সমৃদ্ধ। তারা এখন শুধু আফগানিস্তানেই যুদ্ধ করছে না বরং ফিলিস্তিনে, ইরাকে, পাকিস্তানে, ইয়ামানে, মিশরে, কাশ্মিরে, সুদানে, সোমালিয়ায় ও আরো অনেক জায়গায় যুদ্ধ করছে। কাফেররা যেখানেই চ্যালেঞ্জ করছে সেখানেই মুসলিম মুজাহিদরা মোকাবেলা করে যাচ্ছে। কোথাও তাঁরা কাফেরদেরকে যুদ্ধ করা থেকে বঞ্চিত করছে না। এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকলে মুসলিমরাই আবার বিশ্বের বিজয়ী শক্তি হিসাবে অচিরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
সুতরাং যাঁরাই আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে আগ্রহী তাঁদেরকে সকল প্রকার বাতিলের চোখ রাঙ্গানীকে উপেক্ষা করে দ্বীন কায়েমের সঠিক পথে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ (সুব:) ইরশাদ করেছেন:
অর্থ: “আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও ।”

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন