ইক্বামাত শব্দের অর্থ কি? ইক্বামাতে দ্বীন বলতে কি বুঝায়?

 

ইক্বামাত শব্দের অর্থ কি? ইক্বামাতে দ্বীন বলতে কি বুঝায়?

প্রশ্ন: ইক্বামাত শব্দের অর্থ কি? ইক্বামাতে দ্বীন বলতে কি বুঝায়? 

উত্তর: ইকামাত শব্দটির আরবীতে কয়েকটি প্রতিশব্দ রয়েছে:

↓, অর্থ: উপরে উঠানো, দাঁড় করানো, তুলে ধরা । 

অর্থ: নির্মাণ করা, তৈরী করা, অস্তিত্বে আনা, স্থাপন করা  অর্থ: প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিষ্ঠান কায়েম করা ।

অর্থ: স্থাপন করা যেমন খুঁটি স্থাপন করা। সুতরাং 'ইক্বামাত' শব্দের অর্থ হলো:- কায়েম করা, প্রতিষ্ঠা করা, চালু করা, দাঁড় করানো, অস্তিত্বে আনা ইত্যাদি । কুরআন পাকে । কথাটি বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ “সালাত কায়েম কর।"

(ইকামাতুস সালাত) মানে 'সালাত চালূ করা'। ফরয।

সালাতের পূর্বে মুয়াজ্জিন যেই ‘ইকামাত’ দেয় এর শেষ দিকে বলা হয় এ

অর্থাৎ সালাত দাঁড়িয়ে গেছে বা সালাত শুরু হয়েছে । সালাতের মাসআলা শেখা, সালাত সম্পর্কে জানা বা সালাতের বয়ান করাকে ‘ইক্বামাতে সালাত' বলে না। বরং বাস্তবে সালাত চালূ হয়ে যাওয়াকেই “ইক্বামাতে সালাত' বলে।

কোন ব্যাক্তির জীবনে সালাত কায়েম হওয়ার অর্থ হলো যে, সে নিয়মিত, যথা সময়ে, জামায়াতের সাথে সঠিক নিয়মে সালাত আদায় করে । কোন মহল্লায় সালাত কায়েম হওয়ার অর্থ হলো মহল্লায় মসজিদ বিদ্যমান থাকা, সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জামায়াত চালু থাকা এবং মহল্লার অধিকাংশ লোকে জামায়াতে শরীক হওয়া। বাংলাদেশ ক্কায়েম হওয়ার অর্থ হলো বাস্তবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র স্থাপিত হওয়া । একটি কারখানা কায়েম হওয়ার অর্থ হলো কারখানা চালু হওয়া। ঠিক তেমনি দেশে দ্বীন ইসলাম কায়েম হওয়ার অর্থ হলো সরকার ও জনগণের যাবতীয় কাজ-কর্ম কুরআন-হাদীস অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া ।

“ইক্বামাতে দ্বীন” এমন একটি পরিভাষা, যার অর্থ বাংলায় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। “আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা” বা “দ্বীন ইসলাম কায়েম করা” এর সহজ তরজমা হতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী হুকুমত, ইসলামী সমাজ, নেযামে ইসলাম ইত্যাদির যে কোন একটি কথার সাথে “কায়েম করা” কথাটি যোগ করলে “ইক্কামাতে দ্বীন” শব্দটির পারিভাষিক অৰ্থ বুঝায় ।

ইক্বামাতে দ্বীনের মর্ম সঠিকভাবে বুঝার জন্য বাস্তব উদাহরণ প্রয়োজন । আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের উদাহরণ দিলেই বিষয়টা সহজ হবে। সবাই একথা স্বীকার করতে বাধ্য যে, বাংলাদেশে কুরআনের আইন ও রাসূলের আদর্শ রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম নেই। এ দেশটি ইসলামী রাষ্ট্র নয়। সরকারও সঠিক অর্থে মুসলিম নয় । দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি-অর্থনীতি, দেশীয় বৈদেশিক নীতি ইত্যাদির কোনটাই ইসলামী বিধান দ্বারা পরিচালিত নয় । স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যে, কোন্ আদর্শ, নীতি বা বিধান অনুযায়ী এই রাষ্ট্র, সরকার ও অন্যান্য সবকিছু চলছে? নিম্নে তার উত্তর প্রদান করা হলো।

কুরআনের পরিভাষায় ইসলামী বিধানকে (২১) বলা হয়েছে । অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য করাই “একমাত্র সত্য জীবন ব্যবস্থা"। সমাজে একজন অন্যজনের অনুগত না থাকলে কোন সমাজই চলতে পারে না। ইসলামের দাবী হলো যে,

অর্থ: “জেনে রাখ, সৃষ্টি যার, বিধান চলবে তারই ।”২৭ সুতরাং যেহেতু সৃষ্টি আল্লাহর তাই বিধান চলবে তাঁরই। সবার কর্তব্য একমাত্র আল্লাহরই আনুগত্য করা। মানব সমাজের শান্তি ও সুশৃংখলা একমাত্র একজন মনিবের পূর্ণ আনুগত্যের উপরেই নির্ভর করে । আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হতে পারে না। আর কেউ নির্ভূলও নয় । সুতরাং সকলের কল্যাণে সত্য ও সঠিক বিধান শুধু তিনিই দিতে পারেন । তাই তাঁর রচিত বিধান 'দ্বীনে ইসলামই একমাত্র সত্য বা 'দ্বীনে

সুরা আ'রাফ ৭:৫৪ | 

হক'। এই 'দ্বীনে হকে’র বিপরীতে যা কিছু সবই অসত্য, ভুল ও ক্ষতিকর । আল্লাহর আনুগত্যের বিরূদ্ধে আর যত প্রকার আনুগত্য রয়েছে তা সবই ‘দ্বীনে বাতিল' বা মিথ্যার আনুগত্য। ‘হকে’র বিপরীত পরিভাষাই হলো ‘বাতিল’ ।

উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে যে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু রয়েছে তা ‘দ্বীনে বাতিল'। 'দ্বীনে হক' যেখানে কায়েম নেই সেখানে যেটাই চালু আছে সেটা অবশ্যই 'বাতিল'। সে হিসেবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সরকার, সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিষ্ট ব্যবস্থা, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইত্যাদি সবই 'দ্বীনে বাতিল'।” সুতরাং বাংলাদেশে যেহেতু ‘দ্বীনে হক' বা আল্লাহ (সুব:)এর মনোনীত 'দ্বীনে ইসলামে'র আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয় না, তাই এটা স্পষ্ট যে এদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা 'দ্বীনে বাতিলে’র অনুসরণ করেই পরিচালনা করা হয়। হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য কিছু ইসলামের কথা শুনা যায়, কিন্তু তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আল্লাহ্ (সুব:) আদেশ করেছেন পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করতে । ইরশাদ হচ্ছে:

{يا أيها الذين آمنوا ادخلوا في السلم كافة ولا تتبعوا خطوات الشيطان إنه لكم }


অর্থ: “হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ।”২৮ এ আয়াতে আল্লাহ (সুব:)এর ঘোষণা হলো, ইসলাম গ্রহণ করতে হলে পরিপূর্ণভাবেই গ্রহণ করতে হবে। তোমাদের পছন্দ মতো ইসলামের একাংশ গ্রহণ করে অন্য অংশ ত্যাগ করলে ইসলাম গ্রহণ করা হবে না ।

অপর আয়াতে আরো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

 مـنكم إلـا بغافل - {أفتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعل ذ خزي في الحياة الدنيا ويوم القيامة يردون إلى أشد العذاب وما الله ب

সুরা বাক্কারা ২:২০৮ ।

 অর্থ: “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন । 

এ আয়াতে আল্লাহ (সুব:) বলছেন, আমার আনুগত্য করতে হলে সব ক্ষেত্রেই আমাকে ‘মনিব’ হিসেবে মেনে নিতে হবে। যেখানেই তোমরা ইসলামকে বাদ দিবে সেখানেই তোমরা শয়তানের অনুসারী হবে। এজন্যই কোন ব্যক্তি যদি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ইসলামকে মানে কিন্তু রাজনৈতিক ময়দানে গণতন্ত্রী বা ধর্মনিরপেক্ষ হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রী বা পুঁজিবাদী হয় তাহলে সে ইসলামকে পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি বলেই বুঝা যাবে । বরং সে কুরআনের পরিভাষায় মুজাবজাব' বা 'দোদুল্যমান ব্যক্তি’ বলে গণ্য হবে। যেটা মুমিনদের স্বভাব নয় বরং মুনাফিকদের চরিত্র। ইরশাদ হচ্ছে:

{مذبذبين بين ذلك لا إلى هؤلاء ولا إلى هؤلاء ومن يضلل الله فلن تجد له سبيلا} 

অর্থ: “তারা এই (দ্বীনের ব্যাপারে দোদুল্যমান, না এদের (মুমিনদের) দিকে আর না ওদের (কাফেরদের) দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না । 

এ জাতীয় লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ (সুব:)আরও বলেছেন: 

{إن الذين يكفرون بالله ورسله ويريدون أن يفرقوا بين الله ورسله ويقولون 1) أولئك هم (100)}


تؤمن يبغض وتكفر ببعض ويريدون أن يتخذوا بين ذلك سبيلا الكافرون حقا وأعتدنا للكافرين عذابا مهينا} [النساء :]

অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় (অর্থাৎ সকলকে মানতে চায় না) এবং বলে, 'আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি' এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে।

সুরা বাক্কারা ২:৮৫ । ৩° সুরা নিসা ৪:১৪৩।

 চায়, তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব । ৬৩১ 

এটা একটা সাধারণ বিষয় যে, আপনার বাড়িতে যদি কোন মেহমান এসে দরজার ভিতরে অর্ধেক প্রবেশ করে আর অর্ধেক বাহিরে থাকে, তাহলে আপনি তাকে বলবেন, হয়তো ঘরের ভিতরে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করুন, নতুবা সম্পূর্ণ বাহিরে থাকুন । ঠিক তেমনিভাবে ইসলামে প্রবেশ করলেও পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হবে । আংশিক প্রবেশ করলে চলবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে মানবে, আর জীবনের বিশাল অংশে মানব রচিত আইন মেনে চলবে তা হতে পারে না। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর প্রতি আস্থার কথা লেখা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র’ নয় । কারণ “দ্বীনে হক” এ দেশে চালু নেই । যেটা চালু আছে সেটা সাধারণ যুক্তিতেই দ্বীনে বাতিল, এ বাতিল ব্যবস্থা ইংরেজ আমল থেকেই চালু রয়েছে । দ্বীনে বাতিলই এখানে বহুকাল থেকে বিজয়ী হয়ে আছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

বিদআত থেকে সাবধান হতে করনীয়