বর্তমান যুগে দ্বীনে বাতিলের অনুসারীরা দ্বীনে হক্কের বিরূদ্ধে কি ধরণের চক্রান্তে লিপ্ত আছে?
বর্তমান যুগে দ্বীনে বাতিলের অনুসারীরা দ্বীনে হক্কের বিরূদ্ধে কি ধরণের চক্রান্তে লিপ্ত আছে?
উত্তর: বর্তমান যুগের দ্বীনে বাতিলের অনুসারীরা তাদের পূর্বসুরী ফেরআউন, নমরূদ, আবু জাল, আবু লাহাবদের সহ সকল দ্বীনে বাতিলের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা ছাড়াও নতুন কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যা পূর্বে দ্বীনে বাতিলের অনুসারীরা করে নি। আর সেগুলো সর্ম্পকে র্যান্ড এর কিছু পরিকল্পনা ও পরামর্শ তুলে ধরলাম । এখানে Rand ইনস্টিটিউট-এর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তুলে ধরতে চাই । Rand একটি মুনাফাবিহীন সংগঠন। যার ১৬০০ জন কর্মচারী রয়েছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণের ফলাফল সমূহ মার্কিন প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। ৯৭
“র্যান্ড (RAND) ইনস্টিটিউটের ২০০৭ সালের একটি রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করছি। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বে যে সংগ্রাম চলছে, তা সত্যিকার অর্থে একটি ‘মতাদর্শগত যুদ্ধ’ এর ফলাফলই নির্ধারণ করবে মুসলিম বিশ্বের আগামী দিনের পথ নির্দেশনা।” যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চতুর্মাসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র এমন এক যুদ্ধে জড়িত যা একই সাথে অস্ত্রের ও আদর্শের । এই যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় শুধুমাত্র তখনই অর্জিত হবে যখন চরমপন্থীদের আদর্শকে তাদের নিজেদের সমাজের জনগণ এবং সমর্থকদের চোখে কলঙ্কিত অথবা অখ্যাত করা যাবে।”
সুতরাং তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে যে যুদ্ধ ও সংঘাত চলছে তা কোন সাধারণ বিষয় নয়। বরং তা হচ্ছে মতাদর্শের যুদ্ধ। মুসলিম দেশগুলোতে সঠিক ইসলাম থাকবে নাকি অমুসলিমদের মর্জি মোতাবেক তথাকথিত মডারেট ইসলাম থাকবে? পূর্ণাঙ্গ ইসলাম থাকবে নাকি পীরপন্থী ও সূফীবাদীদের নরম ইসলাম থাকবে? সত্যিইতো আজ মুসলিম বিশ্ব মাতদর্শগত যুদ্ধে লিপ্ত আছে। ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম বিশ্বে একদিকে একদল মুসলিম কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কায়েমের জন্য যুদ্ধ করছে অপরদিকে আরেকদল নামধারী মুসলিম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করছে। এই যে আদর্শের দ্বন্দ্ব চলছে, এই ব্যাপারে অমুসলিমরা কি ভাবছে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমরা একটি ইউ.এস.নিউজ (US news) এবং ওয়াল্ড রিপোর্ট তুলে ধরছি। সেখানে বলা হয়েছে:
“৯/১১ আক্রমনের পরে বারবার ভুল পদক্ষেপ নেয়ার পর আজ ওয়াশিংটন পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের তুলনায় নজিরবিহীন এক রাজনৈতিক যুদ্ধের প্রচারণা করেছে যুক্তরাষ্টের সরকার । সামরিক, মনস্তাত্ত্বিক অভিযান এবং সি.আই.এ (CIA) এর গোপন অভিযান পরিচালনার জন্যে নিয়োজিত দলগুলো থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে যোগাযোগ মাধ্যম (রেডিও, টি.ভি, সংবাদপত্র, ইত্যাদি) এবং বুদ্ধিজীবিদের অর্থনৈতিক যোগান দেওয়া পর্যন্ত। ওয়াশিংটন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে এমন এক প্রচার অভিযানে, যার লক্ষ্য শুধুমাত্র মুসলিম সমাজকেই নয়, ইসলামকেও প্রভাবিত করা ।”
বুঝা গেল কাফের শক্তিগুলো শুধু মুসলিমদেরকেই ধ্বংস করতে চায় না বরং ইসলামকেও বিকৃত করার মাধ্যমে পরিবর্তণ করতে চায়। আর এই কাজটি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তারা পারে বোমা হামলা করে কিছু মুসলিমদেরকে হত্যা করতে কিন্তু ইসলামের কোন পরিভাষাকে পরিবর্তণ করা অথবা অর্থ বিকৃতি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটার জন্য প্রয়োজন একদল আলেম, পীর-মাশায়েখ, বড় বড় মসজিদের ইমাম ও খতীব, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বক্তা যারা ইসলামের অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করার পরিবর্তে বলবে ইসলাম মানে শান্তি। যারা জিহাদের অর্থ পরিবর্তণ করে বলবে জিহাদ মানে চেষ্টা অথবা তারা বলবে নফসের জিহাদ বড় জিহাদ । অথবা বলবে এই যুগে অস্ত্রের জিহাদ নয় বরং কথার জিহাদ, কলমের জিহাদ ও নফসের জিহাদের মাধ্যমেই দ্বীন কায়েম করতে হবে এ জন্য ইতিমধ্যেই ইহুদী-খৃষ্টান জগত অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা তাদের মুখেই শুনা যাক । ঐ প্রবন্ধেই বলা হয়েছে:
“ওয়াশিংটন গোপন ভাবে কমপক্ষে চব্বিশটি দেশে অনুদান প্রদান করেছে রেডিও এবং টেলিভিশনে (জিহাদ বিমুখ) ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য, মুসলিম স্কুলে (জিহাদ বিরোধি) কোর্স চালুর জন্যে। অনুদান প্রদান করেছে মুসলিম বুদ্ধিজীবিদের জন্যে ও রাজনৈতিক কর্মশালার জন্যে অথবা অন্যান্য কর্মসূচি পালনের জন্যে। শুধুমাত্র ‘মডারেট ইসলামকে' উৎসাহিত করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সাহায্য দেয়া হচ্ছে মসজিদ নির্মাণের জন্যে, এশিয়ান কুর'আন রক্ষা করার জন্যে, এমন কি ইসলামী স্কুল (মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ।"
বুঝা গেল অমুসলিমরা ওদের দালাল তৈরী করার জন্য কতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অনেক সফলতাও অর্জই করেছে। বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষনের সমাপনী অনুষ্ঠানে আমেরিকার নর্তকী দিয়ে ব্যালেড্যান্স করানোর মাধ্যমে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ।
Rand থেকে প্রকাশিত, শেরিল বার্নার্ড রচিত একটি প্রতিবেদনের নাম হলো “সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম” (সামাজিক গণতান্ত্রিক ইসলাম)। শেরিল বার্নার্ড একজন ইহুদী, যে বিয়ে করেছে একজন মুরতাদকে, যখন সে নামধারী মুসলমান ছিল তখন তার নাম ছিল জালমাই খলিল জাদ। জালমাই খলিল জাদ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সে এক সময় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছে এবং সে আফগানিস্তান ও ইরাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল । তাকে খুব স্পর্শকাতর পদে নিয়োগ করা হয়ে থাকে । শেরিল বার্নার্ড হচ্ছে তার স্ত্রী। সে (শেরিল বার্নার্ড) র্যান্ড এর জন্যে “সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম” নামক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সে প্রতিবেদনে ইসলামের যারা সঠিক কথা বলে, তাওহীদের কথা বলে, শিরক-বিদআতের বিরূদ্ধে কথা বলে, জিহাদ ও মুজাহিদীনদের পক্ষে কথা বলে তাদের বিরূদ্ধে, তাদের ভাষায় মডারেট মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয় । নিম্নে তাদের পরামর্শগুলোর তুলে ধরা হলো:
এক: “আমাদের র্যান্ড মুসলিমদের কাজ (লেখা বই, প্রবন্ধ) কম খরচে (বা ভর্তুকি দিয়ে) প্রকাশ এবং বিতরণ করা উচিত।” এটা হয় মিথ্যার প্রসার ঘটানোর জন্যে ।
দুই: “তাদেরকে (মডারেট মুসলিম) উৎসাহ দান করা জনসাধারণ এবং যুবকদের উদ্দেশ্যে বই-পুস্তক, রচনা-প্রবন্ধ ইত্যাদি লেখার জন্যে । যাতে যুবকরা এবং সাধারণ মুসলমানগণ জিহাদ ও জঙ্গিবাদের বিরূদ্ধে অবস্থান নেয়।”
তারা উপলব্ধি করেছে যে মুসলিম বিশ্বের জনসাধারণ সত্যকে বুঝে নিতে সক্ষম এবং তারা জানে কারা তাদের জন্য কথা বলে এবং কারা বলে না। এই অমুসলিমরা জানে যে যুবকদের থেকেই তাদের বিপদ আসে কারণ যুবকরাই হল তারা যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে পারে। ইবরাহিম (আ:) যুবক ছিলেন যখন তিনি মুর্তিগুলোকে ধ্বংস করে ছিলেন এবং সূরা কাহাফের গুহার ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি যে যারা গুহায় চলে গিয়েছিল তারা যুবক ছিল। আমরা সীরাতের গ্রন্থ থেকে জানতে পারি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়াতের প্রথম দিকের অনুসারীরা ছিলেন যুবক। সুতরাং সে (শেরিল বার্নার্ড) যুবকদের পথভ্রষ্ট করার জন্য উৎসাহিত করেছে ।
তিন: “তাদের (মডারেট মুসলিম) দৃষ্টিভঙ্গিকে ইসলামী শিক্ষার পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা ।”
তারা এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা অনেক মুসলিম দেশের পাঠ্যক্রমকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যে সব বিষয় জিহাদ, হুদুদ, আল্লাহর শাসন নিয়ে কথা বলে তা পাঠ্যক্রম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সম্পূর্ণ অধ্যায়ই মুছে ফেলা হয়েছে, পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে । যার ফলে স্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটি এমনকি মাদরাসার ছাত্রদেরকেও জিহাদের বিরূদ্ধে অবস্থান নিয়ে ওদের শিখানো মতে জঙ্গিবাদ বিরোধী বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান করছে ।
চার: “প্রাক-ইসলামী এবং যা ইসলামী নয় সেই সমস্ত ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচার মাধ্যম ও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সে সম্পর্কে সচেতনতাকে উৎসাহিত করা।”
যেমন, ফেরাউনিক সভ্যতা কে পুনর্জাগরিত করা। ফেরাউন সম্পর্কে আলোচনা করা এবং ওদের সম্পর্কে একটি ভাল মনোভাব সৃষ্টি করা। ইসলামী সংস্কৃতির পরিবর্তে ওদের সভ্যতা, ওদের সাফল্য, ওরা যে উন্নয়ন সাধন করেছিল তা নিয়ে আলোচনা করা, সমাজে ইসলামের পূর্ব সংস্কৃতিকে পুনর্জাগরিত করা এবং প্রাক-ইসলামী আরব এবং জাতীয়তাবাদ নিয়ে আলোচনা করা। আবার, উত্তর আফ্রিকার বর্বর লোকদের নিয়ে আলোচনা করা, শামের দেশের রোমান ও গ্রীক সময়ের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা। এই কারনেই আমরা দেখতে পাই যে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা (Archeologists) মধ্যপ্রাচ্যের প্রাক-ইসলামী ইতিহাসের উপর বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে তারা মেসোপটেমিয়া এবং ফেরাউনের সময় মিশরের অবস্থা নিয়ে অনেক আলোচনা করছে। এভাবে মুসলিম যুবকদের অন্তর থেকে ইসলামের সোনালী যুগের ইতিহাস ও সভ্যতাকে ভুলিয়ে দিয়ে ইসলামের পূর্বের ইতিহাস ও সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করার গভীর চক্রান্তের নীল নকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ।
পাচ: “সূফীবাদের জনপ্রিয়তা” এবং এর “গ্রহণযোগ্যতা” কে উৎসাহ দান করা।” এটি একটি মারাত্মক চক্রান্ত। কারণ ওরা জানে যে, ওরা হয়তো বোমা হামলা করে কিছু মুসলিমদের হত্যা করতে পারবে কিন্তু এতে স্থায়ী কোন ফায়দা হবে না। সাধারণ মুসলিম ও যুবকদের অন্তর থেকে জিহাদি চেতনা বিলুপ্ত হবে না। বরং আরো তারা কাফের-মুশরিকদের বিরূদ্ধে জিহাদ করার জন্য ঈমানী চেতনায় ফুসে উঠবে। পক্ষান্তরে একদল আলেম, মুফতী, মুহাদ্দেস, মুফাসসির ও মসজিদের ইমাম ও খতীব যদি জিহাদের বিরূদ্ধে বক্তব্য দেয় এবং জিহাদকে বিতর্কিত করে দেয় সেটা সাধারণ জনগণ এবং যুবকদের মধ্যে অনেক বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে। সেকারণেই তারা পীরবাদ, সূফীবাদ ইত্যাদিকে উৎসাহিত করছে। সুতরাং ওরা তাসাউফ”-এর প্রসার করতে চায়। এটা এই জন্য নয় যে ওরা তাসাউফকে ভালোবাসে। ওরা একে ভালোবাসে জিহাদের বিরূদ্ধে এদের অবস্থানের কারণে এবং এদের উদার বা নরম পন্থী মনোভাবের কারণে । কিন্তু ওরা কি কখনও উমর আল-মুখতার’-এর তাসাউফের (দুনিয়ার বিলাসিতা ত্যাগের) কথা, অথবা উত্তর আফ্রিকা বা সেই মহা দেশে (ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে) আন্দেলন বা সংগ্রাম হয়েছিল তা প্রচার করবে?
অতঃপর, শেরিল বার্নার্ড তার প্রতিবেদনে “মৌলবাদীদের বিরোধিতা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কৌশল” শিরোনামে কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে। নিম্নে তার সেই প্রস্তাবগুলোর কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
ক. “তাদের সাথে অবৈধ দল এবং কর্মকান্ডের সম্পর্ক প্রকাশ করা।” একারণেই আমরা বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি যারা দ্বীনে হকের পক্ষে কথা বলে তাদেরকে মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী, জে.এম.বি, আল-কায়েদা ইত্যাদি বলে মুসলিম সমাজে বিতর্কিত করা হয় এবং নানাভাবে হয়রানী করা হয় । খ. তাদের ধ্বংসাত্নক কর্মকান্ডের পরিণতিগুলো প্রচার করা ।
এখানে সে (শেরিল বার্নার্ড) বলেছে যে, আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদদের অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনাগুলোকে আমাদের হিসেবে নেয়া উচিত এবং তা প্রচার করা এবং তা নিয়ে বিশাল হুলুস্থুল বাঁধিয়ে দেয়া। আর যখন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের বোমাগুলো আবাসিক এলাকায় পড়ে এবং মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ সবাইকে হত্যা করে, তখন তা এড়িয়ে যাও, এ সম্বন্ধে কোন কথা বলো না, এবং এ (ঘটনাগুলো) ভুলে যাও, যদি তা বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ হয়ে যায়, তাহলে অজুহাত খুঁজে বের কর। আর যদি মুসলিমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, কোন ভুল করে অথবা যদি অনিচ্ছাকৃত কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে তাকে একটি বড় বিষয়ে পরিণত কর এবং তা প্রচার করতে থাক। এ ক্ষেত্রেও তারা অনেক সফলতা অর্জই করেছে। আফগানিস্তানে যদি কাফের সৈন্যরা সাধারণ জনতার উপরে হামলা করে তা নিয়ে কোন হৈ-চৈ নেই কোন রকম তোলপাড় নেই। কিন্তু যদি মুজাহিদীনদের সমান্য ভুল-ভ্রান্তিও ধরা পরে সেক্ষেত্রে তিলকে তাল বানিয়ে প্রচারের ঝড় বইয়ে দেওয়া হয় গ. “মৌলবাদী, চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের ধ্বংসাত্মক কাজের জন্যে তাদের
প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকা ।” অর্থাৎ মুসলিম মুজাহিদীনদের বীরত্বের প্রশংসা করা, বন্দী শত্রুদের সঙ্গে তাদের সদাচরণ করা ইত্যাদির কোন প্রশংসা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরপর সে কি বলছে জানেন? সে বলছে: “তাদেরকে মানসিকভাবে বিশৃঙ্খল এবং কাপুরুষ ব্যক্তি হিসেবে
চিহ্নিত কর, খল নায়ক হিসেবে নয় ।”
কখনও কখনও আপনি আপনার শত্রুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারেন তার কিছু গুণের জন্যে । যেমন ধরুন, পশ্চিমারা সালাহ্ উদ্দিন আইয়ুবীর বিনয় ও সাহসীকতাকে লুকাতে পারেনি। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন জাতি এবং জনগোষ্ঠির মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল তথাপিও শত্রুরা অন্য পক্ষকে শ্রদ্ধা করতো এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রশংসা করতো। যেমন, ওরা বলতো ‘হ্যা এটা সত্য যে তারা আমাদের শত্রু, কিন্তু আমাদের সত্য কথা বলতে হবে, তারা সাহসী' অথবা 'হ্যা এটা সত্য যে তারা আমাদের শত্রু, কিন্তু তাদেরও একটি মূল্যবোধ রয়েছে' ইত্যাদি ।
শেরিল বার্নার্ডের মতে, তাদের এই ধরনের শ্রদ্ধাবোধও দেখানো উচিত নয়, মুসলিম বীরদের কখনই খল নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয় । তারপর সে বিশেষ ভাবে মুসলিম বীরদেরকে মানসিক ভারসাম্যহীন ও কাপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। এক্ষেত্রেও তারা অনেক সফলতা অর্জই করেছে। আমরা আশ্চর্যজনক ভাবে দেখতে পাচ্ছি যে, বর্তমানে কিছু মুসলিমনামধারী নেতা-নেত্রী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক এমনকি একদল বক্তা ও খতীবদেরকে তোতা পাখির মত তাদের এই শিখানো এই বুলিগুলো আওড়াতে শুনা যাচ্ছে। যারা পাঞ্জাবী পায়জামা পড়ে অত্যাধুনিক মারনাস্ত্রের সামনে দাড়িয়ে শুধু বন্দুক অথবা পাথর দিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন তাদেরকে বলা হচ্ছে কাপুরুষ । আর যারা বুলেটপ্রুফ পোষাক পরিধান করে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত হয়েও মুসলিম মুজাহিদীনদের ভয়ে লেজ গুটিয়ে পলায়ন করে তাদেরকে বলা হচ্ছে বীরপুরুষ । যারা বন্দীদেরকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করার পরে তাদের গায়ে পেশাব করে দেয় তাদেরকে বলা হয় বীরপুরুষ । আর যারা বন্দীদেরকে নিজেদের খাদ্যের মধ্যে সমান অংশীদার বানায় অথবা নিজেরা না খেয়ে শত্রুপক্ষের বন্দীদেরকে খেতে দেয় তাদেরকে বলা হচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন, কাপুরুষ। যারা সতী-সাধবী নারীদেরকে গ্রেফতার করে জেলখানার অন্ধ কুঠরিতে পালাক্রমে, জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তাদেরকে বলা হয় বীরপুরুষ। আর যারা বন্দী নারীদেরকে আপন মা বোনের মতো হেফাজত করে তাদেরকে বলা হয় মানসিক ভারসাম্যহীন কাপুরুষ। এটাই হচ্ছে বর্তমান ইহুদী-খৃষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধসহ সকল কাফের-মুশরিকদের চরিত্র ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন