মীলাদ খতমের বিদআত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
মীলাদ খতমের বিদআত:
মানুষ মারা গেলে তিনদিনা মিলাদ, চল্লিশা মিলাদ, মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ। আবার জন্মদিবস, ম্যারেজ ডে ইত্যাদি উদযাপন করা হয়। আবার এর সাথে কখনো কখনো যুক্ত হয় পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম নামক আরেক বিদআত । অথচ এগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে কিংবা তাঁর কোনো সাহাবী করেননি। কুরআন ও হাদীসে কোনো ভিত্তি নেই বরং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করানো কিংবা কোনো প্রকার দুআ-অজিফা করানো সম্পূর্ণ হারাম। যে পড়ে সেও হারাম কাজ করে, যে পড়ায় সেও হারাম কাজ করে।
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে মাআরিফুল কুরআনে নিম্নের আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে: এ 'তোমরা আমার আয়াতকে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করো না।' (বাকারা ২:৪১ )
এ আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে: “ঈসালে সওয়াব উপলক্ষ্যে খতমে কোরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে না জায়েয আল্লামা শামী 'দুররে মুখতারের শরাহ' এবং 'শিফাউল-আলীল' নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলাদিসহ একথা প্রমাণ করেছেন যে, কোরআন শিক্ষাদান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন, তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যুতি দেখা দিলে গোটা শরীয়তের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে। কেননা পূর্বে কোরআনের শিক্ষকমন্ডলীর জীবনযাপনের ব্যয়ভার ইসলামী বায়তুল মাল (ইসলামী ধনভান্ডার) বহন করত, কিন্তু বর্তমানে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে এ শিক্ষকমন্ডলী কিছুই লাভ করেন না। ফলে যদি তাঁরা জীবিকার অন্বেষণে চাকরী-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করেন, তবে ছেলে-মেয়েদের কোরআন শিক্ষার ধারা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কোরআন শিক্ষার বিনিময়ে প্রয়োজনানুপাতে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ইমামতি, আযান, হাদীস ও ফেক্বাহ শিক্ষাদান প্রভৃতি যে সব কাজের উপর দ্বীন ও শরীয়তের স্থায়িত্ব ও অস্তিত্ব নির্ভর করে সেগুলোকেও কোরআন শিক্ষাদানের সাথে সংযুক্ত করে প্রয়োজনমত এগুলোর বিনিময়েও বেতন বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। -- দুররে মুখতার, শামী ।
সুতরাং এ অনুমতি এ সব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এ জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদেহের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশে কোরআন খতম করানো বা অন্য কোন দোআ-কালাম ও অজিফা পড়ানো হারাম। কারণ, এর উপর কোন ধর্মীয় মৌলিক প্রয়োজন নির্ভরশীল নয় । এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোরআন পড়া হারাম, সুতরাং যে পড়বে এবং যে পড়াবে তারা উভয়েই গোনাহগার হবে। বস্তুত: যে পড়েছে সে-ই যখন কোন সওয়াব পাচ্ছে না, তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কি পৌঁছাবে? কবরের পাশে কোরআন পড়ানো বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোরআন খতম করানোর রীতি সাহাবী, তাবেয়ীন এবং প্রথম যুগের উম্মতগণের দ্বারা কোথাও বর্ণিত বা প্রমাণিত নেই। সুতরাং এগুলো নি:সন্দেহে বিদ'আত।” (তফসীর মাআরেফুল কোরআন (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর) পৃষ্ঠা ৩৫, সূরা বাক্কারা ৪১ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
কবর-মাজার পূজার বিদআত:
ভারতবর্ষে আল্লাহর অলীদের শ্রদ্ধার নামে চালু হয়েছে নানা ধরণের বিদআত । জীবিত অবস্থায় তাদের কাশফ খোলা থাকার নামে ‘আলেমুল গায়েব' দাবী করা। আল্লাহর ফয়সালা বদলে দেয়ার মতো ক্ষমতা দাবী করা। আল্লাহ ওয়ালাগণ ফানা ফিল্লাহর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়ার আক্বীদাহ পোষন করা। তাদের আল্লাহর মাঝে ও তাঁর বান্দাদের মাঝে মধ্যস্থতাকারী ও সুপারিশকারী হিসেবে ভায়া মাধ্যম মনে করা। আর তারা মারা গেলে তাদের কবরকে মাজারে পরিণত করা। মাজারে গিলাফ চড়ানো । টাকা-পয়সা, আগরবাতী, মোমবাতি দেয়া। মাজারে সেজদা করা, তাওয়াফ করা, মাজারের নামে পশু যবাই করা। মাজারের নামে মানত করা। মাজার ওয়ালার কাছে প্রার্থণা করা । বাৎসরিক ওরশ পালন করা। এসব কিছুই শিরক বিদআতযুক্ত মানুষের তৈরী করা মনগড়া শরিয়ত। কুরআন ও সহীহ হাদীসে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও কখনো করেননি, কাউকে করতে বলেননি এবং রাসূলের আদর্শে সৈনিক সাহাবায়ে কিরামগণ কখনো করেননি। এগুলো নিঃসন্দেহে বিদআত ।
পীর-মুরিদীর বিদআত:
ভারতবর্ষের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী বিদআতের নাম হলো পীর-মুরিদী । পীরের কাছে মুরিদ হওয়া ফরজ। পীরকে বিভিন্ন তরিকার বাইআত দিতে হবে চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশাবন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া ইত্যাদি সহ প্রায় সাড়ে তিনশ তরিকার বাইআত চালু আছে এই ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাতির খলীফাতুল মুসলিমীনদের বাইআতকে রাষ্ট্রিয় বা জাতীয় পর্যায় থেকে ছিনতাই করে পীর-মুরিদী নামক বিদআত চালু করে রাষ্ট্রিয় খিলাফত ধ্বংস করার স্থায়ী চক্রান্ত করা হয়েছে। শুধু তাই না! বিভিন্ন তরিকার স্বতন্ত্র যিকির-আযকার, দুআ-অজিফা আবিষ্কার করে কুরআন-সুন্নাহতে বর্ণিত যিকির-আযকার ও দুআ অজিফাকে নির্মূল করার চক্রান্ত করা হয়েছে। খতমে খাজাগান, দূরুদে নারিয়া, দূরুদে তাজ, দূরুদে হাজারী, হাফসে দমের যিকির, পাস-আনপাসের যিকির, ছয় লতিফার যিকিরসহ বহু ধরণের বিদআত চালু করেছে এই পীর-সূফীরা । রাসূলুল্লাহ (সা.) এর তরিকার পরিবর্তে এ সকল তরীকার যিকির এদের কাছে বেশী তাছীর (প্রভাব সৃষ্টি করে। এই পীর-সূফীদের আবার রয়েছে অনেক স্তর । গাউস, কুতুব, গাউসুল আজম, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবুল আলম, কুতুবে আকতাব, খাজা নাওয়াজ, বান্দা নাওয়াজ, গরীব নেওয়াজ, জুলফে দারাজ, গেছুঁ দারাজ, আতা বখশ, গঞ্জে বখশ ইত্যাদি উপাধী দিয়ে পীর-সূফীদের আল্লাহর আসনে বসিয়েছে। এমনকি তাদের অনেকের ধারণা অলীরা নবী রাসূলদের থেকে বড়। কেননা নবী-রাসূলগণ অহী প্রাপ্ত হন জিবরাঈলের মাধ্যমে আর অলীরা ইলম অর্জণ করে সরাসরী আল্লাহর (সুব.) এর নিকট থেকে । তাছাড়া নবুওয়্যাত ও রিসালাত শেষ হয়ে যায় এবং হয়ে গেছে । কিন্তু বেলায়াত কখনো শেষ হবে না। এ বিবেচনায়ও অলীদের মর্যাদা নবী রাসূলদের থেকে উর্দ্ধে। এভাবে অলীদের নবী-রাসূলদের সমতুল্য বা তার চেয়ে বেশী মর্যাদা দিয়ে তরীকত পন্থী নামে নতুন এক শরিয়তের জন্ম দিয়েছে পীর-সূফী নামধারী এই ভন্ড-প্রতারক, গরীর ও মেহনতী মানুষের টাকা-পয়সা আত্মসাৎকারী পীর সাহেব নামক বিনাপুজির ব্যবসায়ীরা ।
এদের পীর-সাহেব যতদিন জীবিত থাকেন তিনি হন গদ্দীনাশীন আর তার বড় ছেলে হন শাহ সাহেব। গদ্দীনাশীন মারা গেলে শাহ সাহেব তার স্থলাভিষিক্ত হন এভাবে পীর-মুরিদীর নামে এক রমরমা ব্যবসা চালু আছে ভারতবর্ষে । যে কারণে কোনো পীরকে গরীব দেখা যায় না। এরা মুরিদদের থেকে খেদমতের নামে পা টিপা, মাথা টিপা, শরীর চাপার মতো খেদমত নিয়ে থাকে । অনেক সুন্দর চেহারার পীরেরা তাদের মুরীদদের সুন্দরী স্ত্রী ও মেয়েদের বিশেষ খাদেমা নিয়োগ করেন বলে জানা যায়। এসকল নারীদের ভোগ করার জন্য তারা ব্যবহার করে শরীয়তের বিভিন্ন পরিভাষা। যেমন তাদের প্রথমে ফানা অর্থ বুঝানো হয়: কারো মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অতঃপর ফানাকে তিনভাগে ভাগ করা হয় । ফানা ফিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। ফানা ফিররাসূল অর্থাৎ রাসূলের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া এবং ফানা ফিশ শায়েখ অর্থাৎ পীরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অতঃপর তাদের বুঝানো হয় মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ফালা ফিল্লাহ এর অংশ, গলা থেকে নাভি পর্যন্ত ফানা ফির রাসূলের অংশ আর নাভি থেকে নিচ পর্যন্ত ফানা ফিশ শায়েখ বা পীরের অংশ। এ শিক্ষা দেয়ার পর পীর তার মুরীদের সাথে অপকর্ম করতে আর কোনো বাঁধা থাকে না। এমনকি কোনো কোনো পীর সম্পর্কে শুনা যায় যখন সে তার মুরীদের স্ত্রী বা মেয়ের সঙ্গে জিনায় লিপ্ত হয়েছে আর মুরীদ তা দেখতে পেয়েছে তখন মুরীদকে বুঝানো হয়েছে যে, যদিও বাহ্যিকভাবে তুমি তাকে জিনা করতে দেখতে পাচ্ছ, মূলত সে গভীর সমূদ্রে চলমান কোনো নৌযানের ছিদ্রপথ মেরামত করছে (নাউযুবিল্লাহ)। পীরের নির্দেশে শরিয়াত বিরোধী কাজ করা কোনো অন্যায় নয় বরং পীর যদি প্রকাশ্য শরিয়তের বিরুদ্ধেও কোনো হুকুম জারী করেন মুরীদের তা বিনা বাক্যে মেনে নিতে হবে এ ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি করা চলবে না । এ প্রসঙ্গে পীর-সূফীদের প্রায় সকল তরীকত পন্থিদের বইয়ে একটি প্রসিদ্ধ কবিতা পাওয়া যায়। আর তা হলো:
بی سجادہ رنگن کن گرت پیر مغاں گوید * کہ سالک بے خبر مہ بود زراہ ورسم منزل
কামেল পীরের আদেশ পাইলে নাপাক শারাব দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গীন করিয়া তাহাতে নামাজ পড়। অর্থাৎ শরীয়তের কামেল পীর সাহেব যদি এমন কোন হুকুম দেন, যাহা প্রকাশ্য শরীয়তের খেলাফ হয়, তবুও তুমি তাহা নিরাপত্তিতে আদায় করবে। কেননা, তিনি রাস্তা সব তৈরী করিয়াছেন। তিনি তাহার উঁচু নিচু অর্থাৎ ভালমন্দ সব চিনেন, কম বুঝের দরুন জাহেরিভাবে যদিও তুমি উহা শরীয়তের খেলাফ দেখ কিন্তু মূলে খেলাফ নহে।' ('আশেক মাশুক' মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক রচিত ৩৫ নং পৃষ্ঠায় )
‘ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা' এর ৭২ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে
عاشقان را ملت و مذہب جداست * عاشقان را ملت و مذہب خداست
‘মাওলানা রুমি ফরমাইয়াছেন প্রেমিক লোকদের জন্য মিল্লাত ও মাজহাব ভিন্ন । তাহাদের মিল্লাত ও মাজহাব শুধু মা'বুদ কেন্দ্রিক ।’ অথচ কুরআনে বলা হয়েছে:
شرع لكم من الدين ما وصى به نوحا والذي أوحينا إليك وما وصـينا بـه إبـراهيـم
أن أقيموا الدين ولا تتفرقوا فيه كبر على المشركين ما تدعوهم إليـه
وموسى وعيسى
الله يجتبي إليه من يشاء ويهدي إليه من ينيب
তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন যে বিষয়ে তিনি গৃহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দ্বীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহবান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন । আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি হিদায়াত দান করেন।' (শুরা ৪২:১৩) এমনিভাবে হাদীসে বলা হয়েছে
قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق عن أم حصين أ
'উম্মে হুসাইন (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য চলবে না।' (জামেউল আহাদীস: হা: ১৩৪০৫, মুয়াত্তা: হা: ১০, মু'জামূল কাবীর: হা: ৩৮১, মুসনাদে শিহাব: হা: ৮৭৩ আবি শাইবা: হা: ৩৩৭১৭, কানযুল উম্মাল: হা: ১৪৮৭৫)
শরিয়তের বিপরিতে কোন পীর, কোন আমীর কারোই আনুগত্য করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
عن على قال بعث رسول الله -صلى الله عليه وسلم- سرية واستعمل عليهم رجـلاً من الأنصار وأمرهم أن يسمعوا له ويطيعوا فأغضبوه في شيء فقال اجمعوا لى حطبا. فجمعوا له ثم قال أوقدوا نارا. فأوقدوا ثم قال ألم يأمركم رسول الله -صلى الله عليه وسلم- أن تسمعوا لى وتطيعوا قالوا بلى. قال فادخلوها. قال فنظر بعضهم إلى بعض فقالوا إنّما فررنا إلى رسول الله -صلى الله عليه وسلم- من النار. فكـانـوا كـذلك
وسكن غضبة وطفئت النار فلما رجعوا ذكروا ذلك للنبي -صلى الله عليـه وسـلم
فقال « لو دخلوها ما خرجوا منها إنما الطاعة في المعروف
'আলী (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন এবং সাহাবীদেরকে তাঁর কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন । অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন । তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেন। সকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নি? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। এটা আমার নির্দেশ।
সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল । যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন 'তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।' (সহীহ মুসলিম হা:নং: ৪৮৭২ সহীহ বুখারী হা: নং: ৪৩৪০ সহীহ মুসলিম বাংলা; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক তরজমা; হা: নং: ৪৬১৫) এ হাদীস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শরিয়তের বিরূদ্ধে কারো হুকুমের আনুগত্য করা যাবে না। না কোন ওলী-বুযুর্গের না কোন পীরে মুগার । আর না কোনো শাসকের।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন