মিলাদ-কিয়ামের বিদআত গুলো কি কি?

 

মিলাদ-কিয়ামের বিদআত গুলো কি কি?

 মিলাদ-কিয়ামের বিদআতঃ 

ভারতবর্ষে আরেকটি বহুল প্রচলিত বিদআতের নাম হলো, মীলাদ-কিয়াম । মীলাদিদের রয়েছে দুটি শ্রেণী একদল বসে মীলাদ পড়ে যারা লা-কিয়ামী নামে পরিচিত । আরেকদল দাড়িয়ে মীলাদ পরে তারা কিয়ামী নামে পরিচিত। দ্বিতীয় শ্রেণী মনে করে রাসূলুল্লাহ (সা.) মীলাদে স্বশরীরে হাজির হন তাই তাকে দাড়িয়ে সম্মান করা উচিত। যারা দাঁড়ায় না তারা বেয়াদব, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সম্মান দিতে জানে না। এরা নিজেদের কেউবা আশেকে রাসূল আবার কেউ বা রাসূল প্রেমিক দাবী করে। আর এজন্য আয়োজন করে বিশ্ব আশেকে রাসূল সম্মেলনের । এদের কিছু শ্লোগান হলো ‘ঘরে ঘরে মিলাদ দিন # রাসূলের শাফাআত নিন'। এরা রাসূল (সা.) এর জন্মদিনকে সকল ঈদের সেরা ঈদ হিসেবে জ্ঞান করে। এ জন্য তাদের শ্লোগন হলো, 'সকল ঈদের সেরা ঈদ # ঈদে মীলাদুন্নবী'। এ আকীদায় বিশ্বাসী লোকেরা নতুন কোনো দোকান-পাট, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বানিজ্য, বিয়ে-শাদী ইত্যাদিতে মীলাদ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তাছাড়া সওয়াবের উদ্দেশ্যে মাঝে মধ্যেই মীলাদের আয়োজন করা হয়। অথচ এসকল আমল সবকিছুই বিদআত। রাসূলুল্লাহ (সা.) মীলাদের মাহফীলে রাসূল (সা.) এর হাজির হওয়ার আক্কীদা কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:  

عن عبد الله قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن لله ملائكة سـياحين فـي الأرض يبلغوني من أمتي السلام

'আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর একদল মালায়েকা রয়েছে যারা যমিনে বিচরণ করে বেড়ায়, যারা আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার নিকট সালাম পৌছায়।' (নাসায়ী ১২৮১; মেশকাত ৯২৪; হাদীসটি সহীহ)

এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) নিজে মীলাদে হাজির হন না বরং তার কাছে সালাম পৌঁছানো হয় ।

তাছাড়া মীলাদ যেমন বিদআত তেমনি মীলাদে কিয়াম করা আরেকটি বিদআত । সাহাবাগণ এ বিদআত করতেন না। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:

 عن أنس قال : " لم يكن شخص أحب إليهم من رسول الله صلى الله عليـه وسـلم وكانوا إذا رأوه لم يقوموا له لما يعلمون من كراهيته لذلك 

‘আনাস (রা:) বলেন, সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসুলুল্লাহ (সা:) অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখতেন তখন

তারা তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না ।” (সুনানে তিরমিযী ২৭৫৪)

এ হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শেষ জীবনে দশ বছর খেদমত করেছেন। তিনি সাহাবায়ে কিরামদের স্বচক্ষে দেখা বাস্তব আমল বর্ণনা করেছেন । সাহাবাদের সামনে রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বশরীরে উপস্থিত হলেও তারা কিয়াম করতেন না। কেননা তারা জানতেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এটা পছন্দ করেন না। তাহলে বর্তমানে ভন্ড আশেকে রাসূলরা রাসূল (সা.) এর মৃত্যুর চৌদ্দশত বছর পরে কাকে খুশী করার জন্য কিয়াম করে? রাসূলুল্লাহ (সা.) কে না শয়তানকে অবশ্যই শয়তানকে খুশি করার জন্য । কেননা শয়তান জিনা ব্যভিচার, চুরি-ডাকাতিসহ বড় বড় গুনাহ করলে যত খুশি হয় তার চেয়ে বেশী খুশি হয় বিদআত করলে। কারণ চোর-ডাকাত ইত্যাদি লোকেরা অন্যায় করলেও তারা এটাকে অন্যায়ই মনে করে সওয়াবের কাজ নয়। হয়তো জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ভুল উপলব্ধি করে তাওবা করে নিবে । কিন্তু বিদআতী ব্যক্তি বিদআত করে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে। তার আর তওবা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং সে নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে। একারণেই শয়তান  মীলাদ, কিয়াম নামক বিদআতে খুশী হয়। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: 

عن أبي مجلز قال " خرج معاوية, فقام عبد الله بن الزبير وابن صـفـوان حـين رأوه

فقال اجلسا, سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من سره أن يتمثـل لـه

الرجال قياما فليتبوأ مقعده من النار 

*আবু মিজলায (র:) বলেন, মুআবিয়া (রা:) একদা বের হলে, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং ইবনে সফওয়ান (রা:) দাঁড়িয়ে গেলেন। মুআবিয়া (রা:) তাদেরকে বসার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি চায় তার জন্য লোকেরা মূর্তির মত দাড়িয়ে থাকুক, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (সুনানে তিরমিজি ২৭৫৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ২৫৫৮২)

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর জন্য দাঁড়ানো থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন । হাদীসে বর্নিত হয়েছে: 

عن أبي أمامة قال خرج علينا رسول الله -صلى الله عليه وسلم- متوكنا على عـصا

فقمنا إليه فقال « لا تقوموا كما تقوم الأعاجم يعظم بعضها بعضا 

‘আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) লাঠির উপর ভর করে আমাদের মাঝে আগমন করার জন্য বের হলেন। আমরা সকলে তার প্রতি দাঁড়িয়ে গেলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা দাড়িও না যেভাবে আজমী লোকেরা একে অপরকে সম্মান করার জন্য দাড়ায় ।' (আবু দাউদ ৫২৩২; মিশকাত ৪৭০০; হাদীসটি জয়ীফ)

এ হাদীসগুলো থেকে পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, কারো সম্মানার্থে দাড়ানো কিংবা দাড়িয়ে থাকা কোনো সওয়াবের কাজতো নয়ই বরং রাসূলুল্লাহ (সা.) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে এবং ইবাদতের নামে বিদআত তৈরী করার কারণে ডাবল গুনাহগার হবে। তবে সম্মান প্রদর্শন ছাড়া বিশেষ কোন প্রয়োজনে দাঁড়ানো বা কাউকে সাহায্য করার জন্য দাঁড়ানো জায়েজ। যেমন সাআদ (রা:) অসুস্থ ছিলেন বিধায় তাঁকে সওয়ারী থেকে নামানোর জন্য সাহাবায়ে কিরাম তার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:  

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال لما نزلت بنو قريظة على حكم سعد هو ابن معاذ بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان قريبا منه فجاء على حمار فلما دنـا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قوموا إلى سيدكم 

'আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, যখন বনু কুরাইযা সা'দ ইবনে মুয়ায (রা:) এর ফায়সালায় (দূর্গ হতে) অবতরন করতে সম্মতি প্রকাশ করল তখন রাসূল (সা:) তাঁকে ডেকে পাঠালেন। আর তিনি তখন রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকটেই অবস্থান করছিলেন। তিনি একটি গাধার উপরে সওয়ার হয়ে আসলেন। যখন তিনি মসজিদের নিকটে পৌঁছলেন, তখন রাসুল (সা:) (আনসার সাহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেন: তোমরা তোমাদের সর্দারের দিকে এগিয়ে যাও।' (সহীহ বুখারী ৩০৪৩; সহীহ মুসলিম ৪৬৫৯) 

এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, কারো যদি সহযোগীতার জন্য দাড়ানো বা এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা সাআদ (রা.) বনূ কুরাইযার ঘটনার পূর্বে অহুদের যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন । আর সে কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকদের হুকুম দিলেন, তোমরা তোমাদের সর্দারের দিকে এগিয়ে যাও । 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

বিদআত থেকে সাবধান হতে করনীয়