নবী রাসূলদের নামে বাড়াবাড়ির বিদআত গুলো কি কি?
নবী রাসূলদের নামে বাড়াবাড়ি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আরেকটি বড় ধরণের বিদআত হলো: নবী রাসূলদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করা। এদেশের একশ্রেণীর মুসলমানরা বিশ্বাস করে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর জাতি নূরে তৈরী, তিনি মানুষ নন। এ কারণে তিনি আল্লাহরই একটি অংশ, ভিন্নকেউ নন । এ আকীদায় বিশ্বাসী লোকরা বলে থাকে
محمد خدا نہیں * خدا سے جدا نہیں
‘মুহাম্মদ খোদা নয়রে খোদার থেকে জুদা নয় # বাতির আলো বাতি নয়রে, বাতির থেকে জুদা নয় । শুধু তাই না এজন্য তারা তৈরী করেছে অসংখ্য জাল হাদীস। তার মধ্য থেকে একটি জাল হাদীস হলো এই: ৬ue bly আমি আহমদ তবে মিম ছাড়া (অর্থাৎ আহাদ), আর আমি আরব তবে আইন ছাড়া (অর্থাৎ রব)।
এ কারণেই কোনো এক সূফীবাদী কবি তার কবিতার মাধ্যমে এই আকীদা ব্যক্ত করেছেন:
আহমদের ঐ মিমের পর্দা তুলে দেরে মন দেখবি সেথায় করছে বিরাজ আহাদ নিরঞ্জন ।' (নাউযুবিল্লাহ) ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা যেভাবে তাদের নবী-রাসূলদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে । এ উম্মতেরও কিছু অংশ ঠিক সেভাবেই নবী রাসূলদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বরং তার চেয়ে বেশী করে । কেননা ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা নবী রাসূলদের আল্লাহর পুত্র দাবী করেছে। আর এ তথাকথিত মিথ্যাবাদী আশেকে রাসূলরা একধাপ এগিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে আল্লাহর অংশ বানিয়ে দিয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই বলেছেন:
الله عنه يقول على المنبر سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول لا
عن عمر رضي
تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم فإنما أنا عبده فقولوا عبد الله ورسوله
‘ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, তোমরা আমার প্রশংসা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে সেরূপ বাড়াবাড়ি করো না যেরূপ বাড়াবাড়ি করেছিলো খৃষ্টান জাতি ইসা ইবনে মারইয়ামের ব্যাপারে তারা ঈসা আ. কে আল্লাহর পুত্র বলে আখ্যায়িত করেছিলো। তাই তোমরা আমার ব্যাপারে শুধু এতটুকু বলো আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।' (সহীহ বুখারী ৩৪৪৫; মুসনাদে আহমদ ১৫৪)
এ তথাকথিত মিথ্যাবাদী আশেকে রাসূলগণ আরো জঘণ্য আক্বীদা পোষণ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কবরে জীবিত আছেন। অথচ কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন বলেই তাকে দাফন করা হয়েছে । জীবিত লোকদের কেউ দাফন করে কি? পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وما محمد إلا رسول قد خلت من قبله الرسل أفإن مات أو قتل القلبتم على أعقـابكم ومن ينقلب على عقبيه فلن يضر الله شيئا وسيجزي الله الشاكرين
‘আর মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল । তার পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে ? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন।' (আল ইমরান ৩:১৪৪)
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: ১ali “নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে।' (যুমার ৩৯:৩০)
রাসুল (স) অতি মানব ছিলেন না যে, তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না। বরং তিনি ছিলেন মানুষ নবী, তাই তাঁর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ছিল। উল্লেখিত প্রমাণাদি দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, মুহাম্মদ (স) একজন মানুষ নবী ছিলেন।
সকল নবী-রাসূলগণ মৃত্যু বরণ করেছেন। আমাদের রাসূল (সা:) যখন মৃত্যু বরণ করলেন তখন বিষয়টি অনেকের কাছেই অস্পষ্ট ছিল। এমনকি ওমর বিন খাত্তাব (রা:) তরবারী হাতে ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি বলবে মুহাম্মদ (সা:) মরে গেছে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিব। একারণে রাসূল (সা:) এর মৃত্যু নিয়ে একটি ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর যখন আবু বকর আসলেন তিনি আয়েশার হুজরায় চলে গেলেন এবং চাদর উত্তোলন করে রাসূলুল্লাহ (সা:)কে চুমু খেলেন। এবং বললেন, আপনার প্রতি আমার পিতা মাতা কুরবান হোক, আপনাকে আল্লাহ (সুব:) দুইবার মৃত্যু দিবেন না। যে মৃত্যু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য বরাদ্দ ছিল তা আপনি গ্রহণ করেছেন। একথা বলে চাঁদর ঢেকে দিয়ে তিনি জনসম্মুখে এলেন । এবং নিমের ঐতিহাসিক খুৎবাটি দিলেন:
عن عائشة .....فقال أما بعد فمن كان منكم يعبد محمدا صلى الله عليه وسلم فـإن محمدا صلى الله عليه وسلم قد مات ومن كان يعبد الله فإن الله حي لا يموت قـال الله تعالى وما محمد إلا رسول إلى الشاكرين والله لكأن الناس لم يكونوا يعلمون أن الله عنه فتلقاها منه الناس فما يسمع بشر إلا يتلوها الله أنزل حتى تلاها أبو بكر رضي ا
‘আয়শা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি (আবু বকর রা:) বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা মুহাম্মদ (সা:) এর ইবাদত করতে তারা জেনে রাখ মুহাম্মদ (সা:) মৃত্যুবরণ করেছেন, আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতে তারা জেনে রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ (সুব:)চিরঞ্জীব তার কোন মৃত্যু নেই। এরপর তিনি কুরআন মাজিদের নিম্মোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন: 'আর মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে ? আর যে ব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না । আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন ।' (সুরা আল ইমরান ৩:১৪৪)
এ আয়াত শোনা মাত্র সকলের কাছে মনে হলো যে, তারা ইতিপূর্বে এ আয়াত কখনো শুনেন নাই, আবু বকর থেকেই প্রথম শুনলেন এবং সকলের মুখে মুখেএ আয়াত উচ্চারিত হতে লাগলো। (সহীহ বুখারী ১২৪১) অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
وما جعلنا لبشر من قبلك الخلد أفإن مت فهم الخالدون
'আর তোমার পূর্বে কোন মানুষকে আমি স্থায়ী জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি অনন্ত জীবনসম্পন্ন হয়ে থাকবে ?’ (আম্বিয়া ৩৪) তাছাড়া একথা কিভাবে গ্রহণ করা যায় যে, তিনি নূরের তৈরী, অথচ যাকে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য অনুসরণীয় একমাত্র আদর্শ হিসেবে আল্লাহ পাঠালেন মাটির মানুষদের কাছে। নূরের তৈরী সৃষ্টির প্রকৃতি, চাল-চলন তো হবে ভিন্ন, তাকে কিভাবে মানুষ পুরোপুরি আদর্শ হিসেবে গ্রহন করে তার যথাযথ অনুসরণ করবে। যাদের বিবেক বুদ্ধি আছে, তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এ ব্যাপারে আর কোন সংশয়ের অবকাশ থাকে না ।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন