শবে বরাতের সপক্ষে দ্বিতীয় দলীল গুলো হলো
শবে বরাতের পক্ষে আরেকটি হাদীস হলো:
عن عائشة قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع
فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظنـت أنـك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل يترل ليلة النصف من شـعبان إلى الـسماء
الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب ‘
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে খুজে পাচ্ছিলাম না। তখন আমি তাকে খুঁজতে বের হয়ে দেখি তিনি 'বাকীতে' আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে দোআ করছেন । আয়শাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি কি মনে করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করেছেন? আয়শা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে এসেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, শাবান মাসের মধ্যরাতে আল্লাহ (সুব.) প্রথম আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি 'কালব' গোত্রের ছাগলের পালের লোমের চেয়েও অধিক সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন।' (তিরমিজি ৭৩৯; ইবনে মাজাহ ১৩৮৯; আহমদ ২৬০১৮)
হাদীসটি ইমাম আহমদ, তিরমিজি এবং ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি বলেন
قال أبو عيسى حديث عائشة لا نعرفه إلا من هذا الوجه من حديث الحجاج وسمعـت محمدا يضعف هذا الحديث وقال يحيى بن أبي كثير لم يسمع من عروة و الحجـاج بـن
أرطاه لم يسمع من يحيي بن أبي كثير
এই হাদীসটি এই সনদ ব্যতিত অন্য কোনো সনদে আমার জানা নেই। আমি ইমাম বুখারীকে এই হাদীসটি দূর্বল হিসেবে চিহ্নিত করতে শুনেছি এবং তিনি বলেছেন এই হাদীসের বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর তার ওস্তাদ উরওয়া থেকে শুনেনি এবং হাজ্জাজ ইবনে আরতা তার ওস্তাদ ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর থেকে শুনেননি। (তিরমিজ ৭৯৩)
ইমাম বুখারী (র.) যাকে হাদীস শাস্ত্রের আমীরুল মুমিনীন বলা হয়, তিনি এ হাদীসটিকে দূর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অপরদিকে হাদীসটির বক্তব্য পর্যালোচনা করলে তার দূর্বলতা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ প্রদত্ত অহী দ্বারা পরিচালিত হতেন । তিনি করতেন এবং যা বলতেন তা অহীর ভিত্তিতেই করতেন ও বলতেন। মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য যা কল্যাণকর তা তাদের বলে দেওয়া এবং যা তাদের জন্য ক্ষতিকর তার থেকে সতর্ক করা ছিল রাসূল হিসেবে তার মৌলিক দায়িত্ব। তার প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিলো যে, তিনি যেন সবকিছু পৌছে দেন । ইরশাদ হয়েছে:
يا أيها الرسول بلغ ما أنزل إليك من ربك
'হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা পৌঁছিয়ে দাও।' (মায়েদা ৫:৬৭) রাসূলুল্লাহ (সা.) তার রেসালাতের জীবনে তার প্রতি ন্যাস্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন । আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, তিনি রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে না পেয়ে তাকে খোঁজার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে ‘বাকিতে’ (মদীনার কবরস্তান) গিয়ে তাকে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়শাকে লক্ষ্য করে বললেন, শাবানের মধ্য রজনী (শবে বরাতে) আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে আসেন এবং 'কালব' গোত্রের ছাগলের পালের লোমের চেয়েও অধীক সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন। এখানে লক্ষণীয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এত মর্যাদা সম্পন্ন একটি রাত সম্পর্কে সন্ধার আগ পর্যন্ত সাহাবায়ে কিরামকে জানালেন না।
তাদেরকে জানালে তারাওতো ইবাদতের সুযোগ পেত। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের পরিবারের কাউকে এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে কিছুই জানালেন না এবং তাদের ইবাদত করার জন্যও বললেন না। অথচ রামাদানের শেষ দশ রাতের ব্যাপারে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: -
قالت كان رسول الله -صلى الله عليــه وسـلم- إذا الله .
عنها - رضی عن عائشة - العشر أحيا الليل وأيقظ أهله وجد وشد المنزر دخل
‘আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমাদানের শেষ দশ দিন আসলে রাসূলুল্লাহ (সা.) রাত জাগতেন, পরিবারের লোকজনকে জাগিয়ে দিতেন এবং কোমড় বেঁধে সক্রিয়ভাবে ইবাদতে লেগে যেতেন। (মুসলিম ২৮৪৪; আবু দাউদ ১৩৭৮; নাসায়ী ১৬৩৮; ইবনে মাজাহ ১৭৬৮)
শাবানের মধ্য রজনী (শবে বরাত) যদি এত মর্যাদা সম্পন্ন রাত হতো তাহলে অবশ্যই পরিবারের লোকদের অবহীত করতেন এবং তাদের জাগিয়ে দিতেন। আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরে বা মসজিদে গিয়ে ইবাদত করেননি। তিনি চলে গেলেন কবরস্থানে। কবরস্থানতো ইবাদতের স্থান নয়। এসব বিশ্লেষনের প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হাদীসটি খুবই দূর্বল । শবে বরাত পন্থী আলেমগণ শবে বরাতের মর্যাদা ও এর এত ইবাদতের পক্ষে কুরআন ও হাদীস থেকে যে দলীল-প্রমান পেশ করে থাকেন উপরে তার পর্যালোচনা করা হলো। পর্যালোচনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হলো যে, সুরা দুখানের আয়াতে বর্ণিত, 'বরকতময় রাত' শবে কদর সেটি মোটেই শবে বরাত নয়। আর প্রমান হিসেবে যে দুটি হাদীস তারা বেশী বেশী পেশ করে থাকেন সেদুটি হাদীসও মুহাদ্দিসগণের হাদীস বিশ্লেষণ ও যুক্তির মানদন্ডে দূর্বল প্রমাণিত হলো । শুধু এ দুটো হাদীসই নয় শবে বরাত সংক্রান্ত যতগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে । সবগুলো হাদীসই দূর্বল (জয়ীফ)। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে রজব হাম্মলী বলেন, এমর্মে বর্ণিত অন্য সকল হাদীসও দূর্বল। (লাতায়েফুল মাআরিফ : ইবনে রজব)।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন