শবে বরাতে যা পরিকল্পনা হয় তা শবে কদরে বন্টন করা হয়: বিস্তারিত আলোচনা করা হল
কোনো কোনো আলেম শবে বরাতের হাদীস ও শবে কদরের হাদীসের সামাঞ্জস্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বলেছেন- যে শবে বরাতে মূলত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । আর শবে কদরে তা দায়ীত্বশীল মালায়েকাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। আর কুরআন নাজিলের কথা? তাও শবে বরাতে নাজিল করা শুরু হয়েছে । যেমন সূফীবাদী গ্রন্থ তাফসীরে বায়যাবীতে বলা হয়েছে:
إنا أنزلناه في ليلة مباركة ليلة القدر ، أو البراءة ابتدىء فيها إنزاله ، أو أنزل فيها جملة
إلى سماء الدنيا من اللوح المحفوظ ، ثم أنزل على الرسول صلى الله عليه وسلم نجومـاً
وبركتها لذلك ، فإن نزول القرآن سبب للمنافع الدينية والدنيوية أو لما فيها من نزول
الملائكة والرحمة وإجابة الدعوة وقسم النعمة وفصل الأقضية.
‘বরকতময় রাত দ্বারা উদ্দেশ্য লাইলাতুল কদর অথবা লাইলাতুল বারাআত যে রাতে কুরআন নাজিলের সূচনা হয়....’ (তাফসীরে বায়যাবী সুরা দুখানের ২-৩ নং আয়াতের তাফসীরে দ্রষ্টব্য)
কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা কেননা পরিকল্পনা যা করার তা আল্লাহ (সুব.)
অনেক আগেই করে রেখেছেন। লাইলাতুল কদরে লাউহে মাজফুজে সংরক্ষিত ভাগ্য লীপি হতে পৃথক করে আগামী এক বছরের ভাগ্য লীপি তথা হায়াত-মাওত, রুজি-রোজগার ও অন্যান্য ঘটনাবলী যা ঘটানো হবে তা লেখক মালায়েকাদের নিকট প্রেরণ করা হয়। মূল তাকদীর আল্লাহ্ (সুব.) তার মহা পরিকল্পনায় বহু পূর্বেই লিখে রেখেছেন তার প্রমান পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وكل شيء فعلوة في الزير – وكل صغير وكبير مستطر
‘আর তারা যা করেছে, সব কিছুই 'আমলনামায়' রয়েছে। আর ছোট বড় সব কিছুই লিখিত আছে। (কুমার ৫৪:৫২-৫৩)
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে:
عن عبد الله بن عمرو بن العاص قال سمعت رسول الله -صلى الله عليـه وسـلم
يقول « كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السموات والأرض بخمسين ألف سنة
'আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, আসমানসমূহ এবং জমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে আল্লাহ (সুব.) স্বীয় মাখলুকের তাকদীর লিখে রেখেছেন ।' (মুসলিম ৬৯১৯) অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে:
قال النبي صلى الله عليه وسلم يا أبا هريرة جف القلم بما أنت لاق
‘নবী (সা.) বলেন, হে আবু হুরাইরা! ভবিষতে যা ঘটবে কলম তা লিখে শুকিয়ে গিয়েছে ।' (বুখারী ৫০৭৫; তিরমিজি ২৬৪২; নাসায়ী ৩২১৫) অপর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে:
عن عبادة بن الصامت قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول إن أول مـا خـلـق
الله القلم فقال اكتب فقال ما أكتب قال اكتب القدر ما كان وما هو كائن إلى الأبد
‘ওবাদা ইবনে সামেত (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ (সুব:) সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। অত:পর কলমকে বললেন, লিখ! কলম বলল কি লিখব? আল্লাহ (সুব:) বললেন, তাকদীর লিখ, যা সংঘটিত হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে তা সবকিছু লিখ ।' (সুনানে তিরমিজি ৩৩১৯)
এ সকল আয়াত ও হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ্ (সুব.) মহা পরিকল্পনা বহুপূর্বেই গ্রহণ করা হয়েছে। তাই শবে বরাতে না কোনো কিছুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় আর না ভাগ্য লেখা হয়। বরং আল্লাহর মহা পরিকল্পনায় লিপিবদ্ধ করা তাকদীর সমূহ প্রতি বছর শবে কদরে দায়িত্বশীল ফেরেশতাদের বুঝিয়ে দেয়া হয় ।
তাকদীরের মাসআলা কদর বা (ভাগ্য) হল: আল্লাহর অনন্ত জ্ঞান ও হিকমাত অনুযায়ী সৃষ্টি কূলের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ । আর ইহা আল্লাহর কুদরতের উপর নির্ভরশীল, তিনি সর্ব বিষয় ক্ষমতাশীল তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা আল্লাহ্র (সুব:) রুবুবীয়াতের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত । আর ইহা ঈমানের ছয়টি রুক্নের অন্যতম একটি রুক্, এর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া এই ছয়টি রুক্নের প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে না। মূলত: কদর বা তাকদীর হলো আল্লাহর (সুব:) সৃষ্টি সম্পর্কীয় মহা পরিকল্পনা । আল্লাহ (সুব:) এর নিকট কোন অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত নেই। তার কাছে সব কিছুই বর্তমান । এ কারণেই তিনি সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে নির্দেশ দিলেন, লিখ! কলম প্রশ্ন করলো, কি লিখব? আল্লাহ (সুব:) বললেন, লিখ যা সংঘটিত হয়েছে এবং যা সংঘটিত হবে। এ থেকে বুঝা যায় অনন্ত ও অনাদীকাল পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে তা সবকিছুই আল্লাহর (সুব:) সেই মহা পরিকল্পনার বাস্তবয়ন। এ ব্যাপারে হাদীসে একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে:
عن أبي هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- احتج آدم وموسى عليهما السلام عند ربهما فحج آدم موسى قال موسى أنت آدم الذي خلقك الله بيده ونفـخ فيك من روحه وأسجد لك ملائكته وأسكنك في جئته ثم أهبطت الناس بخطيئتك إلى الأرض فقال آدم ألت موسى الذي اصطفاك الله برسالته وبكلامه وأعطاك الألـواح فيها تبيان كل شيء وقربك نجيا فيكم وجدت الله كتب التوراة قبل أن أخلـق قـال بأربعين عاما. قال آدم فهل وجدت فيها وعصى آدم ربه فغوى قال نعم. قـال أفتلومني على أن عملت عملا كتبه الله على أن أعمله قبل أن يخلقنى بـأربعين سـنة قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « فحج آدم موسى.
‘আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আদম ও মূসা (আ:) তাদের রবের নিকটে বিতর্কে লিপ্ত হলেন । এবং আদম বিজয় লাভ করলেন। মূসা (আ:) আদম (আ:) কে বললেন, আপনিতো সেই আদম, আপনাকে আল্লাহ (সুব:) নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি নিজেই আপনার ভিতরে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। মালায়েকাদের মাধ্যমে আপনাকে সেজদা করালেন। আপনাকে আল্লাহ (সুব:) জান্নাতে বসবাস করার সুযোগ দিলেন । কিন্তু আপনি আপনার ভূলের কারণে মানব জাতিকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিলেন। উত্তরে আদম (আ:) বললেন: তুমি তো মূসা (আ:)। তোমাকে আল্লাহ (সুব:) স্বীয় রেসালাত ও সরাসরি কথা বলার জন্য মনোনীত করেছেন ।
তোমাকে তাওরাত খন্ড সমূহ দিয়েছেন। যাতে সবকিছুর সুষ্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। তোমাকে আল্লাহ (সুব:) নির্জনে কথা বলার জন্য নৈকট্য দান করেছেন। আচ্ছা! তুমি বলোতো: আল্লাহ (সুব:) আমাকে সৃষ্টির কতবছর পূর্বে তাওরাত লিপিবদ্ধ করেছেন। মূসা (আ:) বললেন, চল্লিশ বছর পূর্বে। আদম (আ:) বললেন, আচ্ছা বলতো তুমি কি তাওরাতে এ কথাটি পেয়েছো আদম তার রবের হুকুম আমান্য করলো ফলে সে বিভ্রান্ত হলো ? মূসা (আ:) বললেন, হ্যা! এবার আদম (আ:) বললেন তাহলে তুমি কি আমাকে এমন একটি বিষয়ে তিরস্কার করছো যে বিষয়টি আল্লাহ (সুব:) আমাকে সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে আমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন: অত:এব মুসা (আ:)আদম (আ:) এর উপর জয়যুক্ত হলেন। (সহীহ মুসলিম ৬৯১৪; সহীহ বুখারী ৩৪০৯)
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় মানুষের যাবতীয় কাজ-কর্ম পূর্বের থেকেই লিপিবদ্ধ হয়ে আছে । বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয় নিম্নে বর্ণিত হাদীসটি থেকে ।
عن علي رضي الله عنه قال كان النبي صلى الله عليه وسلم في جنازة فأخـذ شـينا فجعل ينكت به الأرض فقال ما منكم من أحد إلا وقد كتب مقعده من النار ومقعـده الجنة قالوا يا رسول الله أفلا تتكل على كتابنا وتدع العمل قال اعملوا فكل ميسر لما خلق له أما من كان من أهل السعادة فييسر لعمل أهل السعادة وأما من كان مـن أهل الشقاء فييسر لعمل أهل الشقاوة
‘আলী (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী (সা:) একটি জানাযায় ছিলেন। সেখানে কিছু একটা হাতে নিয়ে (চিত্তামগ্ন অবস্থায়) মাটিতে মৃদু আঘাত করতে লাগলেন । অত:পর বললেন, তোমাদের প্রতিটি মানুষের ঠিকানা অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা আছে। হয়তো জাহান্নামে নতুবা জান্নাতে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি তাহলে আমাদের লিখিত কিতাব (তাকদীর) এর উপর ভরসা করে থাকবো না? এবং আমল করা ছেড়ে দিব না? রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, না! তোমরা আমল করতে থাক। নিশ্চয় যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে ঐটার কাজ সহজ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সৌভাগ্যশীলদের (জান্নাতীদের) অন্তর্ভূক্ত তার জন্য সৌভাগ্যশীলদের আমল সহজ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি হতভাগাদের (জাহান্নামীদের) অন্তর্ভূক্ত তার জন্য হতভাগাদের আমল সহজ করে দেওয়া হবে।' (সহীহ বুখারি ৪৯৪৯; সহীহ মুসলিম ৬৯০৩)
আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
عن ابن عباس قال كنت خلفت رسول الله صلى الله عليه و سلم يوما فقال يا غلام إني
أعلمك كلمات ...واعلم أن الأمة لو اجتمعت على أن ينفعوك بشيء لم ينفعـوك إلا بشيء قد كتبه الله لك ولو اجتمعو اعلى أن يضروك بشيء لم يضروك إلا بـشيء قـد
كتبه الله عليك رفعت الأقلام وجفت الصحف
'আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর পিছনে বসে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দিব। (কথাগুলো মনে রাখবে) ....আর জেনে রাখ! যদি গোটা জাতি একত্র হয় কোন বিষয়ে তোমার উপকার করার জন্য। তবে তারা সকলে মিলে ততটুকুই উপকার করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ (সুব:) তোমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। পক্ষান্তরে যদি গোটা জাতি একত্র হয় কোন বিষয়ে তোমার ক্ষতি করার জন্য তবে সকলে মিলে তোমার অতটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ (সুব:) তোমাদের জন্য লিখে রেখেছেন। কলম তুলে রাখা হয়েছে এবং (তাকদীর লিখিত) কিতাবগুলো শুকিয়ে গেছে।' (সুনানে তিরমিজি ২৫১৬)
তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে, তাকদীরে লেখা আছে বলেই আমরা যে কোন ন্যায়-অন্যায় কাজ করি তা কিন্তু নয় । বরং আল্লাহ (সুব:) যেহেতু অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সবকিছু জানেন সেহেতু তিনি আমরা যা কিছু করবো বা না করবো সব জানেন । তাই তিনি সবকিছু পূর্বেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। অর্থাৎ তিনি লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন সেজন্য আমরা করি তা নয় বরং আমরা করবো তা তিনি জানেন তাই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে, আল্লাহ্ (সুব:) যখন জানেন যে, আমরা অন্যায় করবো তাহলে তিনি তো বাঁধা দিলেই পারতেন। কেন আমাদেরকে অন্যায় ও পাপকাজ করার সুযোগ দিলেন? তার জবাবে আমরা বলবো, যেহেতু পৃথিবীট একটা পরীক্ষার হল । এখানে আমাদেরকে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আর পরিক্ষার হলে নিয়ম হলো যে ভুল লেখে তাকে হলের ভিতরে সংশোধন করে না দিয়ে বরং সে যা লেখে তাতেই তাতে সহযোগীতা করা হয় প্রয়োজনে আরো বেশী ভূল লেখার জন্য অতিরিক্ত কাগজ দেওয়া হয় । ঠিক তেমনি ভাবে এই পৃথিবীতেও কেউ যদি নেক আমল করতে চায় তাকে আল্লাহ (সুব:) স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক সাহায্য করেন। আবার কেউ যদি গোমরাহ হতে চায়, অন্যায়-পাপাচারে লিপ্ত হতে চায় তাতেও আল্লাহ (সুব:) তাকে বাধা প্রদান করেন না। মানুষকে আল্লাহ (সুব:) একটা ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেছেন সে অনুযায়ী মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করে। তার ইচ্ছার সাথে যদি আল্লাহ (সুব:) তাওফীক সহায়ক হয় তাহলে সে ঐ কাজটি করতে পারে। নতুবা করতে পারে না।
এক্ষেত্রে আলী (রা:) এর একটি সুন্দর ঘটনা আছে তার কাছে দুটো লোক এলো। একজন জাবরিয়া মতবাদের আরেকজন কাদরিয়া মতবাদের । একজন বললো, আমি যা ইচ্ছা করি তাই করতে পারি এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কোন ভূমিকা নাই । অপরজন বললো: আমি যা কিছু করি সব কিছুই আল্লাহ (সুব:) করান । আমার নিজের কোন দোষ নেই। এই মতবাদের লোক বর্তমানেও পাওয়া যায় । যারা বলে 'যেমনে নাচাও তেমনে নাচি, পুতুলের কি দোষ" আলী (রা:) উভয় ব্যক্তিকে বললেন, তোমরা একটি পা উপরে উঠাও, তারা উঠালো। অত:পর বললেন, অপর পা টিও উপরে উঠাও তারা শত চেষ্টা করেও তা পারলো না । আলী (রাঃ) বললেন, এখানেই তাকদীরের রহস্য নিহীত রয়েছে । প্রথম পা তোমরা উঠাবার ইচ্ছা করছো, আল্লাহ তাওফীক দিয়েছেন তাই উঠাতে পেরেছো । দ্বিতীয় পাটি উঠানোর ইচছা আগের মতই ছিল কিন্তু আল্লাহ (সুব:) তাওফীক দেন নাই। তাই তোমরা উঠাতে সক্ষম হও নাই। এটাই হলো তাকদীর । এখানে আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে যে, মানুষের ইচ্ছা ক্ষমতাটাও সম্পূর্ণ ভাবে স্বাধীন নয় বরং ওটাও আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وما تشاءون إلا أن يشاء الله رب العالمين
‘আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন ।' (সুরা তাকভীর ৮১:২৯)
তাকদীরের বিষয়টি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ সম্পর্কে নিয়ম হলো আমল করতে থাকা। বেশী জিজ্ঞাসাবাদ না করা এবং এই আকিদা পোষন করা যে আল্লাহ (সুব:) যা কিছু করেন ইনসাফ ও ভিত্তিক করেন সব কিছুই সুপরিকল্পিত ও সুপরিমিতভাবে করেন । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
‘নিশ্চয় আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিত রুপে সৃষ্টি করেছি।' (সুরা ক্বামার ৫৪:৪৯) হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
إنا كل شيء . عن عبد الله بن عمر يقول قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- كل شيء بقـدر
حتى العجز والكيس
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “প্রত্যেক জিনিসই পরিমিত, এমনকি বোকা ও বুদ্ধিমত্তা অথবা অক্ষমতা ও পারদর্শীতা।' (সহীহ মুসলিম ৬৯২২) সুতরাং শবে বরাতের সাথে তাকদীর বা ভাগ্য লেখার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন